নিজের সন্তানকে দিয়ে ভিক্ষা করিয়ে ভিক্ষার টাকায় জুয়া খেলার অভিযোগে গ্ৰেপ্তার হওয়া এক নারী। ছবি: চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ

নিজের সন্তানকে দিয়ে ভিক্ষা করিয়ে ভিক্ষার টাকায় জুয়া খেলার ঘটনায় হোসনে আরা বেগম (৩৮) নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো।

গত রোববার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের আওতাধীন পাঁচলাইশ মডেল থানাধীন বদনাশাহ মাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হোসনে আরা বেগম তাঁর ১১ বছরের মেয়ে রাশেদার পায়ে পলিথিন মুড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দিতেন । সেই পোড়ার ক্ষত দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করিয়ে টাকা সংগ্রহ করে সেই টাকায় জুয়ার আখড়ায় লুডু খেলতেন।

গত ২৭ এপ্রিল মো. রাশেদ, লিমুসহ অজ্ঞাতনামা তিন-চারজনের বিরুদ্ধে রাশেদাকে অপহরণ করার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-০৭ চট্টগ্রামে মামলা করেন হোসনে আরা বেগম। আদালত মামলাটি অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রোর ওপর দায়িত্বভার অর্পণ করেন।

পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রোর উপপুলিশ পরিদর্শক জাহেদুজ্জামান চৌধুরী ওই মামলাটি অনুসন্ধানকালে রাশেদাকে উদ্ধার করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি প্রদানের জন্য আদালতে উপস্থাপন করেন। রাশেদা আকতার আদালতে তাঁর জবানবন্দিতে উল্লেখ করে যে, সে বদনাশাহ মাজারের সামনে ভিক্ষা করত। তার মা হোসনে আরা বেগম পলিথিন দিয়ে তার পা পুড়ে দিত। পোড়া পা দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করে টাকা সংগ্রহ করত। ভিক্ষায় সংগৃহীত টাকা দিয়ে হোসনে আরা বেগম ছক্কা খেলত। রাশেদার ছোট ভাই দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যাওয়ায় তার চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন হয়। তখন রাশেদ ও লিমু তার মাকে আর্থিক সহায়তা করে। পরে রাশেদ ও লিমুর বাসায় রাশেদাকে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে দেওয়া হয়। পরে অনুসন্ধানকালে প্রমাণিত হয় যে, হোসনে আরা বেগম টাকা আদায় করার জন্য রাশেদ ও লিমুর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপহরণ মামলা দেন।

অপহরণের ঘটনাটি সত্য নয় মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো। আদালত প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে রাশেদাকে দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় জড়ানোর জন্য তার মা হোসনে আরা বেগমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০১৩ এর ৭১ ধারা অনুযায়ী এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে বাদী করে এফআইআর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওসি, পাঁচলাইশ মডেল থানাকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে এসআই নুরুল আলম মিয়া গত ১৯ নভেম্বর বাদী হয়ে হোসনে আরা বেগমের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ মডেল থানায় মামলা করেন।
আদালতের নির্দেশে পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রো, চট্টগ্রাম মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।

পিবিআই প্রধান, অ্যাডিশনাল আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএমের তত্ত্বাবধান ও দিকনির্দেশনায় পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিট প্রধান পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা, পিপিএম-সেবার নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক মর্জিনা আকতারের নেতৃত্বে সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর আভিযানিক দল গত রোববার রাত ১০টার দিকে সিএমপি, চট্টগ্রাম আওতাধীন পাঁচলাইশ মডেল থানাধীন বদনাশাহ মাজার এলাকা থেকে হোসনে আরা বেগমকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, হোসনে আরা বেগম নিজের একমাত্র মেয়েকে দিয়ে ভিক্ষা করান। ভিক্ষা করাতে গিয়ে মানুষের সহানুভূতি আদায়ের জন্য সে তার সন্তানের শরীরে বিভিন্ন আঘাতের সৃষ্টি করেন। সন্তানকে দিয়ে ভিক্ষা করানোর মাধ্যমে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে তিনি জুয়া তথা ছক্কা খেলেন। এ ছাড়া তাঁর মেয়ে রাশেদা আকতারকে গৃহকর্মীর কাজ দিয়ে পরে গৃহের মালিকদের অহেতুক হয়রানি করে টাকা আদায়ের জন্য মিথ্যা মামলা করেন।

সোমবার হোসনে আরা বেগমকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চট্টগ্রামে সোপর্দ করা হয়েছে।