আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে নৌপথে যাত্রী, পণ্য ও কোরবানির পশু পরিবহনে নিরাপত্তাসংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নৌ পুলিশের প্রধান বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মোহা. আবদুল আলীম মাহমুদ বিপিএমের সভাপতিত্বে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ঢাকায় নৌ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, বাঅনৌচ (যাপ), লঞ্চ মালিক সমিতি, নৌপরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ নৌপরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, কার্গো ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন, বাংলাদেশ কার্গো ট্রলার বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়ন, লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন বাঘাবাড়ী, সুন্দরবন নেভিগেশন সদরঘাট, এম কে শিপিং লাইনসসহ নৌযান ও নৌপথের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, অতিরিক্ত ডিআইজি ঢাকা রেঞ্জ, ডিসি লালবাগ, ডিএমপি, নৌ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, পুলিশ সুপার নারায়ণগঞ্জ অঞ্চল, পুলিশ সুপার ঢাকা অঞ্চল, নৌ পুলিশের ৯টি অঞ্চলের পুলিশ সুপারবৃন্দ এবং নৌ পুলিশের ১৪২টি থানা-ফাঁড়ির পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ অনলাইনে সভায় সংযুক্ত ছিলেন।

সভার শুরুতে একটি ভিডিও এবং পাওয়ার পয়েন্ট প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপনে নৌ পুলিশের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। সভায় উপস্থিত বক্তারা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ নৌপথসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন। সভায় জানানো হয়, পবিত্র ঈদে নৌপথ ব্যবহারকারী যাত্রীদের যাত্রা সহজ ও নিরাপদ করতে এবং পণ্য ও পশু পরিবহনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৌ পুলিশ কিছু বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
সেগুলো হলো: পন্টুনে হকার ঢোকা নিষিদ্ধ করা, লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা থেকে বিরত থাকা, ছোট ও ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চে যাত্রী পরিবহনে বিরত থাকা, লঞ্চে যাত্রীসংখ্যার আনুপাতিক হারে লাইফ জ্যাকেট, বয়া প্রভৃতির ব্যবস্থা রাখা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নৌযান চালানো, সূর্যাস্তের পর বালুবাহী বাল্কহেড ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রাখা, সরকার-নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ ১৩ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, পকেট মারাসহ যেকোনো হয়রানি বন্ধে বিশেষ নজরদারি বৃদ্ধি করা, নৌযান চলাচলের পথে মাছ শিকারের জন্য জাল বিছানো প্রতিরোধ করা, বৈধ কাগজপত্রবিহীন কোনো নৌযান না চালানো, ন্যায্যমূল্যে ভাড়া আদায়ে তদারকি, টার্মিনাল ছাড়া নদীর যেকোনো জায়গায় অন্য কোনো ছোট নৌযান থেকে যাত্রী ওঠানো-নামানো বন্ধ নিশ্চিতকরণ, বিভিন্ন নদীকেন্দ্রিক হাটে জোর করে পশু নামালে বা নামানোর চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, পশুবাহী নৌযান কোন হাটে ভিড়বে তা ব্যানারে লিখে টানানো, প্রতিটি লঞ্চে প্রশস্ত সিঁড়ি, সিঁড়ির দুই পাশে রেলিংয়ের ব্যবস্থা, সব ধরনের নৌযানে পর্যাপ্ত ফায়ার ফাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা।
এ ছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

সভায় নৌ পুলিশের প্রধান বলেন, ‘আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষের নৌপথে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে এবং পশু ও পণ্য পরিবহন নিরাপদ ও নির্ঝঞ্ঝাট করতে নৌ পুলিশ বদ্ধপরিকর।

পবিত্র ঈদে নৌ পুলিশ সব নৌঘাট, নৌ টার্মিনালগুলোতে দায়িত্ব পালন করবে।

নৌ পুলিশের প্রধান বলেন, কোরবানির পশু পরিবহনে যাতে কোনো ধরনের বিঘ্ন না হয়, সে জন্য কোরবানির পশু বহনকারী সব ধরনের নৌযান কোন কোন হাটে ভিড়বে, তা উল্লেখপূর্বক ব্যানার লাগাতে হবে এবং কোরবানির পশুসহ অন্যান্য পণ্যবাহী নৌযান নৌপথে কোনো প্রকার হয়রানির শিকার যাতে না হয়, সেদিকে নৌ পুলিশের বিশেষ নজরদারি থাকবে। নৌপথে যেকোনো সমস্যায় নৌ পুলিশের কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০১৩২০১৬৯৫৯৮ অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরের মাধ্যমে নৌ পুলিশকে অবগত করলে নৌ পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

নৌ পুলিশের প্রধান আরও বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপনে নৌপথ ব্যবহারকারী প্রত্যেকে যেন নিরাপদে তাদের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে এবং ব্যবসায়ীরা যাতে নির্বিঘ্নে পণ্য ও কোরবানির পশু নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যেতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে নৌ পুলিশ দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করবে।

নৌপথ ও নৌযানসংক্রান্ত সব সরকারি, বেসরকারি সংস্থা, সেবাপ্রত্যাশী জনগণ, নৌ পুলিশসহ সবার আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা দুর্ঘটনামুক্ত ও নিরাপদ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।