মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে ‘বাংলাদেশ করতে পারে’ এমন ধারণা তৈরি হয়েছে, যা সারা বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। খবর বাসসের।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ৮ জুন (বুধবার) জাতীয় সংসদে পদ্মা সেতু নির্মাণ ও দেশের বৃহৎ এ অবকাঠামোর উদ্বোধনের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ায় তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদে আনীত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় একথা বলেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর মাধ্যমে বাংলাদেশ যে নিজেরাও পারে, সে ধারণা প্রতিষ্ঠিত করে বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদাকে উজ্জ্বল করেছে। আর এটা আমরা করতে পেরেছি আত্মবিশ্বাসের জন্য।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, পদ্মা সেতু আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। টেকনোলজি সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের জ্ঞান বেড়েছে। আমরা ভবিষ্যতে আরও অনেক উন্নত কাজ করতে পারব।’পৃথিবীতে এই ধরনের বিশাল স্ট্রাকচারের সেতু আজ পর্যন্ত তৈরি হয়নি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা। এত রক্ত কোনো দিন বৃথা যেতে পারে না। ’৭৫ থেকে ’৯৬ এবং পরবর্তীকালে ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আমাদের একটা খারাপ সময় গেছে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে ২০০৮ সালের পর থেকে ক্ষমতায় আছি বলেই আজকে উন্নয়নও করতে পারছি এবং পদ্মা সেতুও করতে পেরেছি। তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমি যখন বলেছি নিজেদের অর্থায়নে করব (পদ্মা সেতু), মানুষ এগিয়ে এসেছে।

এ সময় অনেক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে এসেছিল, যাদের অনেকগুলো চেক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিস্বরূপ তাঁর কাছে সংরক্ষিত রেখেছেন জানিয়ে বলেন, সেগুলো ভাঙানোর প্রয়োজন পড়েনি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেতুর মূল নকশা থেকে নদীর নাব্যতা এবং নদীর তলদেশের বৈচিত্র্য, প্রখর স্রোত, পুরো সেতুর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স নিশ্চিত করা, রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প প্রতিরোধক এবং দ্বিতল এই সেতুর ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি, ভুমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের তিন গুণ অর্থ প্রদান এবং বছর বছর নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির বিভিন্ন উদাহরণ টেনে এর ব্যয় নিয়ে ঢালাওভাবে সমালোচনাকারীদের মনমানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
একে একধরনের হীনম্মন্যতা আখ্যায়িত করে ব্যক্তিস্বার্থে তাদের এ ধরনের সমালোচনা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পাহাড়ের ওপর ভারতের ভূপেন হাজারিকা সেতুর নির্মাণ ব্যয় নিয়ে সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্যদের তুলনার উত্তর দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদটি রক্ষার লোভে হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে এই পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করায়। তারা ভেবেছিল যে আমরা এখানে সারেন্ডার করব। কিন্তু আমি শেখ মুজিবের মেয়ে, এটা মনে রাখা উচিত। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি, করব না। আর এই দেশ এবং দেশের মানুষকে আমি ভালোবাসি। কাজেই এ দেশের মানুষের মাথা হেঁট হোক, সে কাজ কোনো দিনও করব না।

ক্ষমতা তাঁর কাছে বড় বিষয় নয়, বরং দেশের মানুষের জন্য কাজ করার একটা সুযোগ বলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন এবং ইনশা আল্লাহ, এ দেশের কোনো মানুষ আর ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না, সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তাঁর প্রতি দেশবাসীর যে সমর্থন, সেটাকেই তিনি তাঁর মূল শক্তি হিসেবে অভিহিত করেন।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মুদ্রাস্ফীতি এবং খাদ্যসংকটের প্রসঙ্গ টেনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ারও পরামর্শ দেন। পাশাপাশি দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখায় তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী কার্যপ্রণালি বিধির ১৪৭ বিধিতে এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। পরে সংসদে সর্বসম্মতভাবে ধন্যবাদ প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।