নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ শাখার প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান চালিয়ে গতকাল রোববার তাঁকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির সিটি-ইনটেলিজেন্স অ্যানালাইসিস ডিভিশনের সিটিআই-৪ টিম। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম হাসিবুর রহমান ওরফে আযযাম আল গালিব। তিনি পটুয়াখালী জেলার মহিপুর থানার হাবিবুর রহমানের ছেলে। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এলএলবি (সম্মান) প্রথম বর্ষের ছাত্র হাসিবুর। খবর ডিএমপি নিউজের।

আজ রোববার দুপুর ১২টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান, বিপিএম (বার)।

হাসিবুরকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে উত্তরা পূর্ব থানায় একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে। হাসিবুরকে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে।

ব্রিফিংয়ে সিটিটিসির প্রধান বলেন, হাসিবুর রহমানের সঙ্গে টেলিগ্রামে একই মতাদর্শ প্রচারের সঙ্গে জড়িত ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্না ইসা’ আইডির সঙ্গে যোগাযোগ হয় এবং তারা একত্রে সংগঠনের প্রচার প্রচারণা, সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করে। হাসিবুর রহমান ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্না ইসা’র সঙ্গে আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ প্রচারের তথাকথিত ‘ত্রি-রত্নের’ প্রধান হিসেবে অনলাইন র‌্যাডিকালাইজেশনের নেতৃত্ব দেয়।

হাসিবুর রহমানের মোবাইল পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম অ্যাপসসহ বিভিন্ন উগ্রবাদী কনটেন্ট পাওয়া গেছে। সম্প্রতি ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্না ইসা’ আইডি পরিচালনাকারী আল আমিন সিদ্দিকী এবং নারী জঙ্গি জোবায়দা সিদ্দিকা নাবিলা সিটিটিসির হাতে গ্রেপ্তার হয়।

হাসিবুর রহমান বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আনসার আল ইসলামের মতাদর্শের বিভিন্ন বক্তব্য প্রচার করত। নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের ছায়াতলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য ছিল তার। এই লক্ষ্যে সে কথিত সশস্ত্র জিহাদের অপরিহার্যতা ও কার্যকারিতা বর্ণনা করে বিভিন্ন পোস্ট দেওয়ার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে সহিংস উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করত।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, হাসিবুর নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ্ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। ২০১৬ সালে এসএসসি পাস করে ঢাকা অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় সহিংস উগ্রবাদ তথা জঙ্গিবাদের আদর্শে দীক্ষিত হয় হাসিবুর। এ সময় সে বিপুল পরিমাণে উগ্রবাদী বই পড়তে শুরু করে। সে প্রাথমিকভাবে ফেসবুকের মাধ্যমে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও আন্তর্জাতিক সহিংস উগ্রবাদী সংগঠন আল-কায়েদার আদর্শ ও মতবাদ প্রচারকারী আইডি ‘জামিল হাসান’ ও ‘মো. জামশেদ হোসেন’ আইডি দুটির সঙ্গে যুক্ত হয়। এই আইডিগুলোতে তালেবান ও আল-কায়েদা বিষয়ে বিভিন্ন লেখালেখি হতো এবং তাদের বিভিন্ন সংবাদ প্রচার করত। হাসিবুর রহমান তাদের লেখালেখি দ্বারা আল-কায়েদা ও আনসার আল ইসলামের মতাদর্শের প্রতি আগ্রহী
সিটিটিসি তথা পুলিশ পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করার কারণে বাংলাদেশে আনসার আল ইসলামের অফলাইনকেন্দ্রিক তৎপরতা একেবারে নেই। যতটুকু আছে তা অনলাইনকেন্দ্রিক। আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ শাখার প্রধান হাসিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের কারণে অনলাইন র‌্যাডিকালাইজ অনেকাংশে দূরীভূত হবে বলে জানান সিটিটিসির প্রধান।

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল মান্নান, বিপিএম-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে সিটিআই-৪ টিম হাসিবুরকে গ্রেপ্তারের অভিযান পরিচালনা করে।