নারায়ণগঞ্জ পিবিআইয়ের অভিযানে গ্রেপ্তার সাত ডাকাতের দুজন। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ৩৮ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় ৭ জন আন্তজেলা ডাকাতকে গ্রেপ্তারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুটি নকল জ্যাকেট এবং একটি খেলনা পিস্তল জব্দ করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পিবিআই।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই (নিঃ) কামরুল হাসান গত ২১ ফেব্রুয়ারি সাইফুল ইসলাম স্বপন (৪৯), নূর ইসলাম (৩৬), মো. রাসেলকে এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন পূর্ব সানারপাড় এলাকা থেকে এবং
মো. রতন (৩৬) ও মো. বাবুল হোসেনকে (৪৩) ২৭ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামি শাহরিয়ার ওরফে মোফাজ্জল (৩১) ও মো. সালাউদ্দীনকে (২৭) গত ৭ মার্চ চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বেলা আনুমানিক সাড়ে ৩টায় মামলার বাদী চট্টগ্রামের লাঙ্গলমোড়ার বাসিন্দা পরিতোষ চন্দ্র ধর (৫০) তাঁর ব্যবসার ৬০ ভরি স্বর্ণ ঢাকার তাঁতীবাজারে ৩৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে সায়েদাবাদ থেকে খাদিজা পরিবহনের গাড়িতে করে টাকাসহ চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন। পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে পৌঁছামাত্র একদল দুর্ধর্ষ ডাকাত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে বাদীর কাছে থাকা ৩৮ লাখ টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ওই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি মামলা করেন।

ডাকাতির এ ঘটনা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, টিভি চ্যানেলসহ সারা দেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। মামলাটি জেলা পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ২০২১ সালের ৮ মার্চ পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলা তদন্তভার গ্রহণ করে।

পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএমের সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিকনির্দেশনায়, পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, পিপিএমের সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই (নিঃ) কামরুল হাসান তদন্ত করেন এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ অভিযানকালে আসামি বাবুলের বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুটি নকল জ্যাকেট এবং একটি খেলনা পিস্তল জব্দ করেন।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং আদালতে আসামিদের প্রদত্ত জবানবন্দি পর্যালোচনায় প্রকাশ পায়, বাদী ঢাকার তাঁতীবাজার এলাকায় পুরাতন স্বর্ণ বিক্রি করে স্বর্ণপট্টি থেকে বের হবার সময় আসামি সালাউদ্দীন তাঁকে তাঁতীবাজার থেকে অনুসরণ করতে থাকেন। বাদী সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে চট্টগ্রামগামী খাদিজা পরিবহনে উঠলে আসামি সালাউদ্দীন কৌশলে ওই একই বাসে উঠে যান।

তারপর সালাউদ্দীন তাঁর সহযোগী আসামি শাহারিয়ার ওরফে মোফাজ্জলকে ফোনে বিষয়টি জানালে মোফাজ্জল, মো. রতন (৩৬), মো. বাবুল হোসেন (৪৩),সাইফুল ইসলাম স্বপন, নূর ইসলাম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর ব্রিজের পশ্চিম পাশে অবস্থান নেয়। সালাউদ্দীন ফোনে অন্য আসামিদের গাড়ির নম্বর এবং অবস্থানের তথ্য পাঠাতে থাকেন। বাদীকে বহনকারী গাড়িটি কাঁচপুর ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে পৌঁছামাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে গাড়ি থামিয়ে আসামি বাবুল, নূর ইসলাম, স্বপন গাড়িতে উঠে বাদীর কাছে অবৈধ টাকা আছে বলে বাদীকে জোরপূর্বক টাকার ব্যাগসহ গাড়ি থেকে নামান । তারপর গাড়ির সামনে অবস্থান করা আসামি রতন, রাসেল, মোফাজ্জল এবং অন্যান্য আসামি জোর করে বাদীর টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে আসামি স্বপনের বাড়িতে গিয়ে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি করে যে যার মতো চলে যান।

পিবিআইয়ের উদ্ধার করা নকল জ্যাকেট ও খেলনা পিস্তল। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

আসামি সাইফুল ইসলাম স্বপন ,নূর ইসলাম, রাসেল গত ২২ ফেব্রুয়ারি এবং আসামি মো. রতন (৩৬), মো. বাবুল হোসেন (৪৩) গত ২ মার্চ ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বিভিন্ন মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে ঢাকা,নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতি, দস্যুতা, চুরির মামলা রয়েছে।