নাটোরের দুই থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইমো হ্যাকার চক্রের ১২ জনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। ছবি: নাটোর পুলিশ

নাটোরের লালপুর ও বাগাতিপাড়া থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইমো হ্যাকার চক্রের ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১৮টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।

নাটোর জেলা পুলিশের প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ‘দেশজুড়ে ইমোর মাধ্যমে প্রতারণার কেন্দ্র লালপুর’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। একই তারিখে দ্য ডেইলি স্টারের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ‘নাটোরের একটি গ্রামে চক্র কীভাবে প্রতিদিন হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে’ শিরোনামে ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এর আগে গত ৩১ আগস্ট ডেইলি স্টারের অনলাইনে ইমো সিন্ডিকেট নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া ডিবিসি নিউজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গত ১৬ সেপ্টেম্বর এ-সংক্রান্ত খবর প্রচারিত হয়।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে নজর পড়ে নাটোরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের। সংশ্লিষ্ট বিচারক সংবাদগুলো পর্যালোচনা করে দেখেন, নাটোরের লালপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র যোগাযোগমাধ্যম ইমো আইডি হ্যাক করে প্রতিদিন প্রবাসীসহ বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এটি আমলযোগ্য অপরাধ।

অপরাধটি দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারাসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ২৩/৩৪ ধারার অধীনে আমলযোগ্য অপরাধ। এগুলো মূলত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ।

বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক অপরাধী চক্রকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের কথা বলেন।

আদালতের নির্দেশে এ বিষয়ে লালপুর থানায় গত ২০ সেপ্টেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। ওই মামলার পরই অভিযানে নামে পুলিশ।

লালপুর: নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহার (পিপিএম-বার) সার্বিক নির্দেশনায় বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, লালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ও নাটোর ডিবির ইনচার্জের নেতৃত্বে তিনটি দল গঠন করা হয়। এসপি দল তিনটিকে নিরবচ্ছিন্ন নির্দেশনা দেন।

তিনটি দল তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় লালপুর থানা এলাকা থেকে ৮ জন ইমো হ্যাকারকে গ্রেপ্তার করে। বাকি হ্যাকারদের ধরতে অভিযান চলছে।

গ্রেপ্তার হওয়া হ্যাকাররা হলেন লালপুরের গন্ডবিল গ্রামের জামিরুল ইসলাম ওরফে জনি (২০), অমৃতপাড়া গ্রামের আতিক হাসান (২৩), মহারাজপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম ওরফে মমিন (১৯), মোহরকয়া গ্রামের মো. লালন (২৫), অমৃতপাড়া গ্রামের শিপন আলী (২৮) ও সুমন আলী (১৯), বিলমাড়িয়া গ্রামের আলম হোসেন (৩৮) ও মোহরকয়া গ্রামের পাপ্পু আলী (১৯)।

এসব ব্যক্তির কাছ থেকে ইমো হ্যাকিংয়ের কাজে ব্যবহৃত ছোট-বড় ১১টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে পুলিশ।

বাগাতিপাড়া: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হওয়ার পর এসপি লিটন কুমার সাহার নেতৃত্বে নাটোরের বাগাতিপাড়া থানা এলাকায়ও পুলিশের তিনটি দল গঠন করা হয়। ওই দলের সদস্যরা নিরবচ্ছিন্নভাবে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বাগাতিপাড়া থানা এলাকা থেকে চারজন ইমো হ্যাকারকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে এক কিশোর রয়েছে। সে বাদে বাকি তিনজন হলেন বাগাতিপাড়ার কৃষ্ণপুর গ্রামের সনি আহমেদ (২০), সুরুজ আলী (২০) ও হারুন অর রশিদ (১৯)।

ওই চারজনের কাছ থেকে ইমো হ্যাকিংয়ের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ছোট-বড় ৭টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।