পুলিশের হেফাজতে গ্রেপ্তার আসামি। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

নড়াইলে চাঞ্চল্যকর শিশু আরাফ মোল্যা হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। আসামি হিসেবে পুলিশ শিশুটির মাকে গ্রেপ্তার করেছে।

গত ২৭ নভেম্বর নড়াইল সদর থানাধীন ৪নং আউড়িয়া ইউপির লস্করপুর সাকিনের মো. মিলন মোল্যা ও মোসা. মৌসুমী খানম দম্পতির ১ মাস ২৭ দিন বয়সের শিশুসন্তান মো. আরাফ মোল্যার লাশ তাদের বসতবাড়ির উত্তর পাশে আলিম মোল্যার মেহগনি বাগানের মধ্যে ছোট পুকুরের পানিতে পাওয়া যায়।

আরাফের বাবা মো. মিলন মোল্যা বাদী হয়ে গত ২৯ নভেম্বর নড়াইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার মোহা. মেহেদী হাসানের নির্দেশনায় জেলা পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামে। অবশেষে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মামলার তদন্ত তদারককারী অফিসার তারেক আল মেহেদী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) তত্ত্বাবধানে জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ মো. সাব্বিরুল আলমের নির্দেশনায় ডিবি পুলিশের একটি চৌকস টিম মোসা. মৌসুমী খানমকে গ্রেপ্তার করেন। আদালতে সোপর্দ করার আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

মামলার তদন্তে জানা যায়, জন্মের পর থেকেই শ্বাসনালি ছোট হওয়ায় আরাফের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হতো এবং দুধ খেতে গেলে গলায় দুধ আটকে যেত। মাঝে মাঝে সে বমিও করে দিত। শিশুটির অনেক ঠান্ডাজনিত সমস্যাও ছিল। যে কারণে তাকে সব সময় চিকিৎসার মধ্যে রাখা হতো। ঘটনার দিন শিশু আরাফ তার মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার সময় হঠাৎ তার মুখ হাঁ হয়ে যায়, শিশুটি চোখ বড় বড় করে তাকায় এবং কিছুক্ষণ পর তার শরীর নীল হয়ে যায়। তখন মা মৌসুমী ভেবেছিলেন, তার গলায় মনে হয় দুধ আটকে গেছে। এরপর তিনি আরাফকে সোজা করে ঝাকাঝাকি করতে থাকেন। কিন্তু শিশুটি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তখন তিনি শিশুটির পালস্ চেক করে দেখেন, শিশুটি মারা গেছে। তখন মৌসুমী খানম কী করবেন বুঝে উঠতে পারেন না। স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে কী বলবেন এই ভেবে ভয় পেয়ে যান। তারপর তিনি তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন এবং স্বামীর ভয়ে তার মৃত শিশুসন্তানকে রাতের আঁধারে সকলের অগোচরে বাড়ির পাশে আলিম মোল্যার মেহগনি বাগানের মধ্যে পুকুরের ভিতর নিজ শিশুসন্তানকে ফেলে রেখে আসেন। এরপর বাড়িতে এসে সবাইকে বলেন, তাঁর ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না এবং ঘটনাটি অন্যদিকে নেওয়ার জন্য জিন-পরি শিশুটিকে নিয়ে গেছে বলে গল্প সাজান।