আসামি আব্দুর রহিম রনি। ছবি: নোয়াখালী জেলা পুলিশ

২২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর সুধারামপুর থানাধীন লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের মৃত রিয়াজ হোসেনের মেয়ে তাসনিয়া হোসেন অদিতার (১৪) লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই দিন সকালে সকালে অদিতার মা রাজিয়া সুলতানা রুবি মেয়েকে বাসায় রেখে প্রতিদিনের মতো তাঁর কর্মস্থল জয়নুল আবেদীন মেমোরিয়াল একাডেমি, বেগমগঞ্জ যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন।

পরে স্কুল থেকে টিউশনি শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বাসায় এসে ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালা লাগানো দেখতে পান। এরপর নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে দরজার তালা খুলে ঘরের ভেতরে ঢুকে দেখতে পান, ওই ঘরের উত্তর পাশের ভিকটিমের শয়নকক্ষের দরজা ভেতর থেকে লক করা এবং ভেতরে টিভি ও ফ্যান চলা অবস্থায় রয়েছে। ঘরের বাথরুমের ট্যাপ খুলে রাখা ছিল। অদিতাকে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরের পেছন দিকে গিয়ে কক্ষের জানালার গ্লাস ভেঙে টিভির আলোতে দেখতে পান, অদিতার দেহ রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানার ওপর পড়ে আছে। পরবর্তী সময়ে কক্ষের দরজার লক ভেঙে ভেতরে ঢুকে অদিতার মা দেখতে পান, আদিতার পরনের পায়জামা খোলা অবস্থায় বিছানার ওপরে পড়ে আছে। গলায় সামনের দিকে কাঁটা ও বাম হাতের রগ কাটা। পুরো বিছানা রক্তে ভেজা এবং খাটের নিচে একটি রক্তমাখা ছোরা পড়ে রয়েছে। ঘরের দুই কক্ষের আলমিরা, ওয়্যারড্রবে থাকা সকল কাপড়চোপড় এবং অন্যান্য জিনিসপত্র এলোমেলো ও বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও কোনো জিনিসপত্র চুরি হয়নি।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন এবং ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করেন।

তদন্তকালে অদিতার মায়ের সাথে আলাপকালে পুলিশ জানতে পারে, আবদুর রহিম রনি (৩০), নামের এক প্রাইভেট টিউটরের কাছে অদিতা প্রাইভেট পড়ত। রনির কাছে হঠাৎ করে অদিতা প্রাইভেট পড়তে অনীহা প্রকাশ করে এবং নতুন প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়া শুরু করে। এতে আবদুর রহিম রনি নাখোশ হন। এ বিষয়সহ অদিতার ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য রনিকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। রনির থুতনি ও ঘাড়ে নখের আঁচড়ের তাজা দাগ দৃষ্টিগোচর হয়। এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি একেক সময় একেক তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। কোনো সদুত্তর না পাওয়ায় তাঁর ব্যাপারে সন্দেহ আরও জোরালো হয়। তখন তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তিন দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করলে ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তাঁকে রিমান্ডে আনা হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আসামি আবদুর রহিম রনি ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন।

রনি পুলিশকে জানান, ২২ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি অদিতার বাসায় যান। বাসায় ঢুকে তিনি অদিতার সাথে গল্পগুজব করেন। একপর্যায়ে রনি অদিতাকে জড়িয়ে ধরেন। ধস্তাধস্তির সময় নিজেকে রক্ষা করার জন্য রনির ঘাড়ে ও গলায় আঁচড় দেয় অদিতা। তখন অদিতাকে তার ভেতরের কক্ষের খাটে ফেলে পরিধেয় ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে ধর্ষণের চেষ্টা করেন এবং বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হন। রাগান্বিত হয়ে অদিতা বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ার ভয়ে রনি বালিশ চাপা দিয়ে অদিতাকে হত্যা করেন। পরে রান্নাঘর থেকে ছোরা এনে অদিতার বাম হাতের রগ এবং গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে হাতের বাঁধন খুলে দেন। এরপর আসামি ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে ঘরের আলমিরা ও ওয়্যারড্রবের সকল কাপড়চোপড় ও কাগজপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ভেতরের রুমের দরজা লক করে এবং ঘরের মূল দরজা বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান।

আসামি আবদুর রহিম রনি শনিবার আদালতে ১৬৪ ধারা মোতাবেক হত্যার দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।