মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে দেশের প্রতিটি জেলায় কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল করার নির্দেশনা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীতে আজ সোমবার বঙ্গমাতা কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের নবনির্মিত ১০তলা ভবন উদ্বোধন করে তিনি এ নির্দেশনা দেন। খবর আজকের পত্রিকার।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে আজ সোমবার বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন এবং ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২২ প্রদান’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি জেলায় এ ধরনের মহিলা হোস্টেল করে দেওয়া উচিত। আমাদের অনেক কর্মজীবী মহিলা আছেন, তাঁরা যেন সঠিকভাবে থাকতে পারেন, সেই ব্যবস্থাটা নেওয়া উচিত। জেলা-উপজেলায় এটা করে দিতে পারলে কর্মজীবী মহিলাদের থাকার ব্যবস্থা হবে।’ উল্লেখ্য, সারা দেশে বর্তমানে ১০টি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল রয়েছে। 

অনুষ্ঠানে দেশের নারী সমাজকে বঙ্গমাতার আদর্শ ধারণ করার জন্য অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘শুধু চাওয়া-পাওয়া আর বিলাসী জীবন নয়। মানুষের কল্যাণে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। আদর্শ মেনে চললে মানুষের জন্য অনেক অবদান রাখা যেতে পারে। আমার মা তাঁর মহান আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে, আমার বাবা যে মহৎ অর্জন করেছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ, সেটাই তিনি দিয়ে গেছেন।’ 

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় আশপাশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে বিভ্রান্ত করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের বোধ হয় একটা চরিত্র আছে, সরকারে কেউ থাকলে তার আশপাশে যারা থাকে, তারা দেশের সার্বিক পরিস্থিতিটাকে খুব সুন্দরভাবে দেখাতে চেষ্টা করে।’ 

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুবই সতর্ক ছিলেন বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। সেই বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই বঙ্গবন্ধু নিয়মিত খাদ্যসচিবের মাধ্যমে দেশের খাদ্যগুদামে চালের মজুত এবং কত চাল আনতে হবে তার হিসাব নিতেন বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নগদ টাকা দিয়ে চাল কেনা হলো কিন্তু আমেরিকা সেই জাহাজ আসতে দেয়নি, সেটা ঘুরিয়ে দিল। চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষটা অনেকটা মনুষ্যসৃষ্টই বলতে হবে।’
সেই সময়ে সারা দেশের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বঙ্গমাতার যোগাযোগ হতো বলে জানান তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা। দেশের কোথায় কী হচ্ছে তা-ও তিনি জানতেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মা আব্বাকে বললেন চালের দাম কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে। আব্বা অফিসে এসে খবর নিলেন।

অফিসে একজন জানাল, এটা তো অত দাম না, এই দাম। আব্বা মাকে বললেন, আমি তো ওদের খবর নিতে বললাম, ওরা বলল এত কম…একটা অল্প দাম বলা হলো। তখন মা আব্বাকে বললেন, তোমাকে ঠিক তথ্য দেয়নি। তোমাকে টাকা দিচ্ছি, যে বলেছে তাকে বলিও আমাকে এক মণ চাল কিনে দিতে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সত্যি টাকা দিলেন তিনি। কিন্তু ওই দামে আর চাল পাচ্ছে না। তখন মা আব্বাকে বললেন, এরা সব সময় তোমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তুমি এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবে; অর্থাৎ রাষ্ট্র চালাচ্ছেন আমার বাবা, কিন্তু পাশে থেকে ছোট ছোট জিনিসগুলো আমার মা খেয়াল করছেন। তারপর পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে চালের দাম কমে এসেছিল। ১০ টাকা কেজির চাল ৩ টাকায় নামিয়ে এনেছিলেন তিনি।’

বঙ্গমাতার সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু মনেপ্রাণে দেশের জন্য কাজ করতে পেরেছিলেন বলে জানান তাঁদের কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো…সে ক্ষেত্রে আমার মা যে সিদ্ধান্তগুলো দিয়েছেন, সেটাই আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের সব থেকে সহায়ক হয়েছে। ছয় দফা বাদ দিয়ে যদি আট দফায় চলে যেত আওয়ামী লীগ, তাহলে এ দেশে কখনো মানুষের মুক্তি আসত না।’ 

ঐতিহাসিক সাতই মার্চে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণে বঙ্গমাতার মতামত গুরুত্ব পেয়েছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সব সময় আমার মা ছিলেন আমার বাবার ছায়াসঙ্গী। বাবার আদর্শটাকে তিনি ধারণ করেছিলেন। প্রতিটি কাজে তিনি সহযোগিতা করতেন।’
মা বেগম মুজিব সংসার গুছিয়ে করতেন বলেও জানান মেয়ে শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি কাজেই তিনি নিয়ম মেনে চলতেন। সেখানে তাঁর মধ্যে কোনো হতাশা দেখেনি। যখন যেখানে যে অবস্থানে থাকতেন, সেভাবে তিনি চলতেন এবং আমাদের তা শিখিয়েছেন।’ 

মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবদ্ধ পাঠ করেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। আরও বক্তব্য দেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব। স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।