গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের কয়েকজন। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

পাবনা জেলা পুলিশের তৎপরতায় আট মাস পর দুর্ধর্ষ ডাকাতির রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। এ ঘটনায় চার দফায় অভিযান চালিয়ে আন্তজেলা ডাকাত দলের ১৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি ট্রাক ও একটি ওয়ান শুটারগান জব্দ এবং তিনটি গরু ও তিন লাখ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।

জেলা পুলিশ জানায়, গত ৮ এপ্রিল দিবাগত রাতে ঈশ্বরদী থানাধীন বড়ইচরা দক্ষিণপাড়া এলাকায় একটি খামারের তত্ত্বাবধায়কের হাত-পা বেঁধে সাতটি গরু ডাকাতি করেন অজ্ঞাতপরিচয় অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা। এ ঘটনায় খামারের মালিক মো. হাফিজুর রহমান রনি ঈশ্বরদী থানায় মামলা করেন।

পাবনার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসীর নির্দেশনায় মামলার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। গোপন তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাত দলের সদস্যদের শনাক্ত করা হয়। এরপর এপ্রিল মাসেই রাজশাহীর কাটাখালী ও চারঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাঁরা হলেন জাহিদ জয়নাল (৫৫), সাজ্জাদ (২৮) ও শাহীন (৩৫)। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঈশ্বরদী থানা এলাকা থেকে অন্য একটি চুরির মামলার তিনটি গরু উদ্ধার করা হয়। পরে আসামি জাহিদ জয়নাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এরপর মে মাসে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, বগুড়া, নাটোর ও রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের আরও চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাঁরা হলেন মো. সামিউল ইসলাম (৩০), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪০), মো. মেহেদুল (২৯) ও মো. লিমন মিয়া (২২)। তাঁদের মধ্যে সামিউলের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে। তিনি দুটি ট্রাকের মালিক এবং তাঁর ট্রাকেই ডাকাতি করা গরু পরিবহন করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ২৫টি, মেহেদুলের বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং লিমনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে।

এরপর জুলাই মাসে রাজশাহী ও নাটোরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের নেতা আব্দুর রহিম বাবু (২২) ও মো. ফরিদকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়। আসামি বাবু কুখ্যাত ডাকাত জাহিদ জয়নালের ছেলে। তিনি গাইবান্ধা, বগুড়া ও গাজীপুর এলাকার ডাকাতদের সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তাঁর বিরুদ্ধে ১২টি মামলা রয়েছে। অপর আসামি ফরিদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে।

উদ্ধার করা গরু। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

পুলিশ জানায়, তিন দফা অভিযান চালিয়েও গরুগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ডাকাত দলের নেতা বাবু আদালতে জবানবন্দি দিলে রহস্যের জট খোলে। ডাকাতির পর গরুগুলো ঈশ্বরদী থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে নিয়ে যান আসামিরা। এরপর ডাকাত দলের অপর সদস্য কসাই বাদশা, সোহেল, শামীম ও সুলতানের কাছে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। পরে চারটি গরু জবাই করেন তাঁরা কিন্তু নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব বাধে। পরে স্থানীয় মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা তিনটি গরু উদ্ধার করেন। এরপর নিলামে বিক্রি করে তিন লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেন।

গত ২ ডিসেম্বর কালিয়াকৈর এলাকা থেকে এই চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা সবাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এভাবে এই দুর্ধর্ষ ডাকাতির রহস্য উন্মোচন করে পাবনা জেলা পুলিশ।