ইন্সপেক্টর জেলারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)-কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন সহকর্মীরা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

বাংলাদেশ পুলিশকে দুই বছর ধরে নানামুখী সংস্কার ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া অগ্রনায়ক ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) তাঁর দায়িত্ব পালনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে সহকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন।

আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ বুধবার সহকর্মীরা এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর মো. কামরুজ্জামান বিপিএম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

বক্তব্য রাখছেন ইন্সপেক্টর জেলারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অতিরিক্ত আইজি ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী, ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, র‍্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান অতিরিক্ত আইজি মো. মনিরুল ইসলাম, ডিআইজি মো. তওফিক মাহবুব চৌধুরী এবং বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পুলিশ ইন্সপেক্টর বি এম ফরমান আলী।

ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেন, সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই মানুষের জীবন। সময় এক বহতা নদী। সময় চলে যায়, জীবন থেমে থাকে না। সংগঠনও জীবনের ন্যায়। এ জন্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে, সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটি সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়।

ইন্সপেক্টর জেলারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)-কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন সহকর্মীরা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

আইজিপি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা একটি ভূখণ্ড, একটি পতাকা পেয়েছি। বাঙালি পরাভব না মানা জাতি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য দেশ ও দেশের জনগণ। আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে হবে।’

বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে দীর্ঘ চাকরির অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আইজিপি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন; এ তিনটি জায়গায় কাজ করা খুব দরকার। তিনি তাঁর কর্মকালীন সকলের সহযোগিতায় কনস্টেবল, সাব-ইন্সপেক্টর ও সার্জেন্ট পদে নিয়োগ বিধিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কনস্টেবল পদে ‘বেস্ট অব দ্য বেস্ট’ প্রার্থী নিয়োগ করা হয়েছে, যার সুফল দেশের জনগণ খুব শিগগিরই পাবেন। তিনি এএসপি পদে নিয়োগ বিধিতেও সংস্কার আনার সময় এসেছে বলে উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আইজিপিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান, অতিরিক্ত আইজি ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী, ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, র‍্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মনিরুল ইসলাম ও অন্য নেতৃবৃন্দ, স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত আইজি মো. মনিরুল ইসলাম, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত আইজি মো. কামরুল আহসান, পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর অতিরিক্ত আইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান, সিআইডির কর্মকর্তাগণ এবং বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে আইজিপির কর্মকালীন খন্ডচিত্রের ভিত্তিতে নির্মিত দুটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে আইজিপিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাগরিকদের অভিমতের ভিত্তিতে ‘পরিবর্তনের পরিক্রমা: নাগরিক অভিমত’ এবং বিট পুলিশিংকে উপজীব্য করে রচিত ‘দুর্জয়ের ডায়েরি’র দ্বিতীয় খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্পেশাল ব্রাঞ্চের অ্যাডিশনাল আইজিপি মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) বলেন, ‘করোনাকালে দায়িত্ব নেওয়ার পরই বাংলাদেশ পুলিশকে উজ্জীবিত করেছেন। এ সময় পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসাসেবার সুযোগ বাড়িয়েছেন। হাসপাতালে যখন কোনো জায়গা ছিল না, তখন বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছেন আইজিপি স্যার। এ ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছেন তিনি।’

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম, পিপিএম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আত্মবিশ্বাসের যে জায়গাটা, সেটা আইজিপি স্যার দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে করোনাকালে মানুষের সেবায় কাজ করেছে পুলিশ। দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদের সব ধরনের সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি। পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে আইজিপির উদ্যোগ ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার) বলেন, ‘আইজিপি স্যারের অধীনে কাজ করে নিজেদের গর্বিত মনে করি। করোনাকালে আইজিপি স্যারের নেতৃত্বে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। আমরা মানুষের বাড়িতে দুধ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছি। আপনার নেতৃত্বে আমরা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলাম। আপনি নতুন নতুন ধারণা নিয়ে এসেছেন, যা পুলিশ আগে কখনোই চিন্তা করেনি। আমাদের ইউনিফর্মের জন্য গার্মেন্টস তৈরি করা, কাগজের জন্য প্রিন্টিং প্রেস তৈরি করা, এ রকম একাধিক ধারণা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে আমাদের অন্যদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট সদস্যদের পাশে দাঁড়াবে। আপনার নেতৃত্বে আমরা ৫২০টি বাড়ি তৈরি করতে পেরেছি। পুলিশ সদস্যের পরিবারের চিকিৎসা, শিক্ষার জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে কাজের মনোবল বাড়বে।’

অনুষ্ঠানে উপবিষ্ট কর্মকর্তাগণ। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

এ সময় আইজিপির ব্যাচমেট বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অ্যাডিশনাল আইজিপি (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ইন্সপেকশন) ড. মো. মঈনুর রহমান চৌধুরী বিপিএম (বার) একসঙ্গে কাজ করার স্মৃতিচারণা করেন।

আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘যা কিছু শুরু হয়, তা নিত্য নিয়মে শেষ হয়। দুই বছর আগে শুরু করেছিলাম। পৃথিবী চক্রাকারে পরিবর্তিত হয়, জীবন চক্রাকারে পরিবর্তিত হয়। বিবর্তন, পরিবর্তন, গমন এবং পুনর্জন্ম; এই চক্রের মধ্য দিয়েই আমরা চলি। পৃথিবীর প্রথম দিকের সাহিত্যগুলো ছিল ওরাল। মুখে মুখে ট্রাভেল করত। গুনাইবিবির পালা আছে, এই পালাটা কে লিখেছে কেউ জানে না। কোনো এক কবি বা লেখক লিখেছেন, মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়েছে। কে লিখেছে কেউ বলতে পারবে না। তখন লিখিত ছিল না। ময়মনসিংহ অঞ্চলের অনেক পালাগান আছে। কে লিখেছে কেউ বলতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগে দায়িত্ব নিয়েছিলাম। আইজিপি হিসেবে কর্তব্য পালন করেছি। অনেক সময় একই ধরনের দায়িত্ব পালন করে গেলে একঘেয়ে লাগে। আমরা অনেক কিছু ভুলে যাই। এই দেশ স্বাধীন হয়েছে, আমরা পতাকা পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধুকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করলে কেন পার্টিজান হবে, জানি না। আমরা যারা এই জেনারেশন, তারা অনেক সৌভাগ্যবান। এক জীবনে আমরা অনেক কিছু পেয়েছি। আমি গ্রামের বাড়িতে কুপি বাতি দেখেছি। গ্রামের মানুষ তখন এত দরিদ্র ছিল যে, কেরোসিন কেনার ক্ষমতা ছিল না। এই মুহূর্তে যাঁর জন্ম, সে যদি জাদুঘরে যায় এবং সেখানে যদি কুপি বাতি থাকে এবং কেউ যদি তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তাহলে জানবে এটা কুপি বাতি। সেই কথা বলতে গেলেই বঙ্গবন্ধুর কথা আসে এবং সেই কথা আসলেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধায় ভেতর থেকেই মাথা নুয়ে আসে। আগে গ্রামের পর গ্রামে কোনো শিক্ষা ছিল না। একজন এসএসসি পাস করলে দশ গ্রামের মানুষ দেখতে আসত। বিএ, এমএ পাস করলে দেখতে আসত। আমি আশির দশকেও সিলভারের হাঁড়ি দেখি নাই। দেশটি এমন ছিল। সেই দেশটা কোথায় আসছে? যে মানুষটা দেশটাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে, তাঁর প্রশংসা করা যাবে না? ১৮ কোটি মানুষকে যিনি সম্মান দিয়ে গেছেন, তাঁর সম্পর্কে কথা বললে কি দলীয় হয়ে যাবে?’

আইজিপি বলেন, ‘যে জাতি তাদের হিরোদের মর্যাদা দেয় না, সে জাতি নতুন কোনো হিরো পায় না। যে জাতি যত বেশি হিরো পয়দা করে, তারা তত বেশি এগিয়ে থাকে। আমাদের বেশি বেশি হিরো পয়দা করতে হবে, এ জন্য আমাদের রিকগনাইজ করতে হবে। জাতি হিসেবে আমরা বিস্মৃতিপ্রবণ, সহজে ভুলে যাই, কোনো কিছু মনে রাখতে পারি না। আমরা দুরন্ত গতিতে সামনে চলি, এটা ভালো। সেই সঙ্গে স্মৃতিও দরকার। ভবিষ্যৎ নির্মিত হয় কীভাবে, অতীতের অভিজ্ঞতা এবং বর্তমানের সঞ্চয় তৈরি করে ভবিষ্যৎ। মাঝে মাঝে অবশ্যই স্মৃতির তহবিলে কী আছে, সেটা দেখা দরকার।’

নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন; এই তিন জায়গায় অনেক কাজ করতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ জন্য গত দুই বছরে এই জায়গায় অনেক কাজ করেছি। নেতা হিসেবে আমি মনে করি, সব ক্রেডিট পুলিশ সদস্যদের। আমরা ৫২০টি বাড়ি বানিয়ে দিয়েছি। এই কাজ কি পুলিশ আগে কখনো করেছে? এটি বাস্তবায়ন করতে অনেক কাজ করতে হয়েছে। আমরা বাংলাদেশে লো কস্ট হাউজিংয়ের ধারণা প্রচলন করেছি, পরিবেশবাদী বাড়ির ধারণা প্রচলিত করেছি। আমরা শুধু বাড়িই বানিয়ে যাব না, নতুন ধারণারও প্রচলন করব।’

পুলিশ হাসপাতাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের ২৫০ শয্যার হাসপাতাল ছিল। এটা ৫০০ শয্যায় উন্নীত করেছে সরকার। এতে করে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়বে। আমাদের হাসপাতালে, ক্যানসার, হৃদ্‌রোগ ও কিডনি রোগের চিকিৎসা হবে। পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে একটা ওষুধ ফ্যাক্টরি করার চিন্তা আছে। এতে অল্প খরচে ওষুধ পাবেন পুলিশ সদস্যরা।’

আইজিপি বলেন, ‘করোনার কারণে টিএ বিলের বাজেট অর্ধেক হয়ে গেছে। সংশোধিত বাজেটে কিছু টাকা বাড়ানো গেছে। আমরা যাতে অপ্রয়োজনীয় টিএ বিল না করি এবং সময়মতো সদস্যরা যেন টিএ বিল পায়।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মহল ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে। এটা নিয়ে কোনো সমালোচনা হোক, আমরা চাই না। এটা দেশের জন্য, মানুষের নিরাপত্তার জন্য করা হয়েছে।’