গ্রেপ্তার আসামি সাইফুল ইসলাম

প্রায় তিন যুগ আগে নাটোরের গুরুদাসপুর থানায় হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুট ও এক
কনস্টেবলকে হত্যা মামলার যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। খবর প্রথম আলোর।

এক চরমপন্থীকে ছিনিয়ে নিতে তার সহযোগীরা গুরুদাসপুর থানায় ওই হামলা চালায়।

সাইফুল ইসলাম নামের ওই আসামি ছদ্মবেশ নিয়ে তিন দশক ধরে পলাতক ছিলেন বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

র‌্যাব জানায়, গতকাল শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ছাত্তার নামে আত্মগোপনে ছিলেন। ১৯৮৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে চরমপন্থীরা গুরুদাসপুর থানায় প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ সময় কনস্টেবল হাবিবুর রহমান বাধা দিলে চরমপন্থীরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে অস্ত্রাগার লুট করে। সেখান থেকে দুটি এসএমজি, ৪টি এসএলআর, ১৮টি ৩ পয়েন্ট ৩ রাইফেল ও গোলাবারুদ লুটের পাশাপাশি বন্দী চরমপন্থী আসামিকে ছিনিয়ে নেয়।

২০০৭ সালে ওই মামলার রায়ে সাইফুল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।

সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর আজ শনিবার দুপুরে ঢাকার কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, থানা লুট ও কনস্টেবল খুনের ঘটনায় ১৯৮৯ সালে সাইফুল ইসলাম গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জামিনে বেরিয়ে তিনি ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে আত্মগোপনে ছিলেন।

জামিনে মুক্ত হয়ে চরমপন্থী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাইফুল বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

কর্মকর্তারা জানান, সাইফুল দলের সঙ্গে আবারও হত্যা, লুটপাট, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। দলের নেতা তারেকের সঙ্গে তিনি নৌকায় বিলের মধ্যে অবস্থান করতেন। ওই সময় সশস্ত্র অবস্থায় বিভিন্ন এলাকায় নৌকার মধ্যেই জীবন যাপন করত চরমপন্থীরা।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০০৪ সালে চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলে দলের নেতা তারেকের নির্দেশে সদস্যরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েন। তখন সাইফুল ইসলাম ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় কিছুদিন তিনি বাসচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ট্রাকে মালামাল ওঠানামার কাজও করেছেন। পরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেন। এ সময় তিনি নিজের পরিচয় লুকিয়ে ছাত্তার নাম ধারণ করেন। পাশাপাশি একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়ে সেখানেই বসবাস করছিলেন। রূপগঞ্জে সাত্তার নামে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছিলেন।

নারায়ণগঞ্জে বসবাস করলেও সাইফুল ইসলাম সর্বহারা দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন জানিয়ে র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক বলেন, চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান স্তিমিত হলে তিনি মাঝেমধ্যে এলাকায় গিয়ে সর্বহারা দলের সঙ্গে বিভিন্ন অপকর্ম করতেন। চরমপন্থী দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে তারেক খুন হলে তিনি দলের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন।

সাইফুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, তিনি ১৯৮৪ সালে চরমপন্থী নেতা তারেকের মাধ্যমে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। চরমপন্থী নেতা তারেক প্রতি সপ্তাহে চাটমোহর এলাকায় তরুণদের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে উঠান বৈঠক করতেন। তারেক বলতেন, দলে যোগ দিলে কোনো অভাব-অনটন থাকবে না। তাঁরা সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করবেন। কেউ তাঁদের কাজে বাধা দিলে তাঁদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। যদি সরকার বা সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তবে তাঁরা পুলিশ হত্যা করে থানা ফাঁড়ি লুট করবেন। ওই সময় তারেকের মাধ্যমে তিনি চরমপন্থী দলে যোগ দেন।