তুরস্ক ও সিরিয়ায় চলতি মাসের শুরুর দিকে হওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যু ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এএফএডি) শুক্রবার রাত পর্যন্ত ভূমিকম্পে ৪৪ হাজার ২১৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সিরিয়ায় কর্তৃপক্ষ তাদের সর্বশেষ আপডেটে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৯১৪ জন বলে জানিয়েছিল; দুই দেশের তথ্য মিলিয়ে নিহতের সর্বশেষ সংখ্যা দাঁড়াল ৫০ হাজার ১৩২ জনে।

এই সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ধসে পড়া অসংখ্য ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ এখনো চলছে।

এর মধ্যেই তুরস্ক গৃহহীন ১৫ লাখ মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সরকারি এক কর্মকর্তা।

৬ ফেব্রুয়ারির ওই ভূমিকম্পে দেশটির ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি ভবনের ৫ লাখ ২০ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট ধসে পড়েছে বা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কয়েক মাসের মধ্যেই নির্বাচনের মুখোমুখি হতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এক বছরের মধ্যে সব ঘর পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের উচিত পুনর্নির্মাণের গতির আগে নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেওয়া। কেননা, কম্পন সহ্য করার উপযোগী বলে দাবি করা অনেক ভবন সর্বশেষ ভূমিকম্পগুলোতে ভেঙে পড়েছিল।

‘একাধিক প্রকল্পের দরপত্র ও চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। খুব দ্রুতগতিতে (বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ) প্রক্রিয়া চলছে,’ বলেছেন তুরস্কের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সরকারি কর্মকর্তা।

দ্রুতগতিতে কাজ চললেও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো রকম ছাড় দেওয়া হচ্ছে না, বলেছেন তিনি।

কর্তৃপক্ষ অসংখ্য গৃহহীনের জন্য তাঁবু পাঠানোর দাবি করলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে অনেকে জানাচ্ছেন।

তুরস্কের সরকারের এখনকার প্রাথমিক পরিকল্পনা হচ্ছে অন্তত দেড় হাজার কোটি ডলার খরচ করে ২ লাখ অ্যাপার্টমেন্ট ও ৭০ হাজার গ্রামীণ ঘর নির্মাণ।

মার্কিন ব্যাংক জেপি মরগানের অনুমান, তুরস্কে বাড়িঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা পুনর্নির্মাণের খরচ দাঁড়াবে আড়াই হাজার কোটি ডলারে।

ইউএনডিপি বলছে, ভূমিকম্প ১৫ লাখ মানুষকে গৃহহীন করেছে এবং নতুন ৫ লাখ বাড়ি দরকার বলে তাদের অনুমান।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘ তুরস্কের জন্য ১০০ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের যে আবেদন জানিয়েছে, সেখান থেকে ১১ কোটি ৩৫ লাখ ডলারও চেয়েছে ইউএনডিপি, এই অর্থ ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজে লাগাতে চাইছে তারা।

ভয়াবহ ভূমিকম্পে তৈরি হওয়া ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ ১১ কোটি ৬০ লাখ থেকে শুরু করে ২১ কোটি টনের মধ্যে থাকতে পারে বলে অনুমান ইউএনডিপির। ১৯৯৯ সালে উত্তর-পশ্চিম তুরস্কে ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ ছিল মাত্র ১ কোটি ৩০ লাখ টন।

তুরস্ক নতুন বিধিবিধানও জারি করেছে, যাতে বিভিন্ন কোম্পানি ও দাতা সংস্থা বাড়ি বা কর্মক্ষেত্র বানিয়ে সেগুলো নগরায়ণ মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করবে, মন্ত্রণালয় পরে সেগুলো যাদের দরকার, তাদেরকে দিয়ে দেবে।

ভয়াবহ ওই ভূমিকম্পের পরও যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের অনেকেই তুরস্কের ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণাঞ্চল ছেড়েছেন কিংবা তাঁবু, কনটেইনারে বানানো বাড়ি বা সরকারি আবাসস্থলে আশ্রয় নিয়েছেন। সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।