বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ফিরেছে। প্রায় তিন বছর পর দেশটি এই কাউন্সিলে ফিরল।

২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ৪৭ সদস্যের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়। তখন ট্রাম্প প্রশাসন মানবাধিকার কাউন্সিলের বিরুদ্ধে ইসরায়েলবিরোধী ধারাবাহিক পক্ষপাতের অভিযোগ আনে। একই সঙ্গে সংস্থাটির সংস্কারের অভাব রয়েছে বলেও অভিযোগ তোলে।

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর খবরে এ কথা জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রকে জেনেভাভিত্তিক এ কাউন্সিলে সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করে। এর মধ্য দিয়ে তিন বছরের বেশি সময় পর কাউন্সিলে ফিরল যুক্তরাষ্ট্র।
রয়টার্স জানায়, ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদে গোপন ভোট হয়। ভোটে যুক্তরাষ্ট্র কোনো বিরোধিতা ছাড়াই ১৬৮ ভোট পেয়ে কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়।

আগামী ১ জানুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তিন বছরের মেয়াদ শুরু হবে।

২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে পরাজিত করেন জো বাইডেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন বাইডেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, তাঁর পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে থাকবে মানবাধিকার। তাঁর প্রশাসন হংকং, তাইওয়ান, জিনজিয়াং প্রভৃতি ইস্যুতে চীনের সমালোচনায় সরব রয়েছে, একই সঙ্গে রাশিয়ারও সমালোচনা করছে ওয়াশিংটন।

বাইডেন প্রশাসনের মানবাধিকার-সংক্রান্ত অবস্থানের ওপর নজর রাখছে রয়টার্স। বার্তা সংস্থার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সব দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের উদ্বেগ এক নয়। জাতীয় নিরাপত্তা ও বিদেশি শক্তির সঙ্গে সম্পর্কের অনুকূলে ওয়াশিংটন এ বিষয়টি ঠিক করছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরিচালক লুইস চার্বোনেউ জানান, বাইডেন প্রশাসন মানবাধিকারকে অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে আনার বিষয়ে কতটা গুরুত্ব দেয়, তা প্রমাণ করার সুযোগ যুক্তরাষ্ট্রের সামনে এসেছে। ভুলত্রুটি অনেক হয়েছে। কিন্তু এবার বন্ধু-শত্রুনির্বিশেষে মানবাধিকারের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের সময় দেওয়া উচিত।

জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড জানান, ওয়াশিংটন প্রাথমিকভাবে আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চীন, ইথিওপিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেনের মতো দেশগুলোর শোচনীয় পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে মনোযোগ দেবে।
লিন্ডা আরও জানান, তাঁদের লক্ষ্য স্পষ্ট—মানবাধিকার রক্ষায় যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সরব হওয়া।

ইসরায়েলের প্রতি মানবাধিকার কাউন্সিলের সামঞ্জস্যহীন আচরণেরও যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতা করবে বলে জানান লিন্ডা।

মানবাধিকার কাউন্সিলে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ভৌগোলিক গ্রুপে সদস্য নির্বাচিত হয়। গতকাল ১৩ নতুন সদস্য নির্বাচন ও ৫ সদস্যের পুনর্নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না। এ কাউন্সিলে কোনো দেশ টানা দুবারের বেশি সদস্য থাকতে পারে না।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজাখস্তান, গাম্বিয়া, বেনিন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, প্যারাগুয়ে, হন্ডুরাস, লুক্সেমবার্গ, ফিনল্যান্ড, মন্টেনেগ্রো ও লিথুয়ানিয়া নির্বাচিত হয়েছে।

এ ছাড়া পুনরায় সদস্য নির্বাচিত হয়েছে ক্যামেরুন, ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, ভারত ও আর্জেন্টিনা।
২০০৬ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল গঠিত হয়। জেনেভাভিত্তিক এ কাউন্সিলের লক্ষ্য বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সমুন্নত ও সুরক্ষা প্রদান।