এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের সহসভাপতি, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক, ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। এরই অংসগ হিসেবে গত ২১ মার্চ শেষ হওয়া বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টের তৃতীয় আসরে অংশ নিয়েছে আর্জেন্টিনা, ইংল্যান্ড, পোল্যান্ডের মতো দেশ। এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে কাবাডি বিশ্বে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের সহসভাপতি, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক, ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।

জাগোনিউজ২৪ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাবাডির উন্নয়ন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টের তিনটি আসর করলাম। প্রথম আসরে অংশ নিয়েছিল ছয়টি, দ্বিতীয় আসরে আটটি এবং এবার ১২টি দেশ অংশ নিয়েছে। আমরা পরের আসর করব ১৬টি দেশ নিয়ে। সেটা আরও জাঁকজমকপূর্ণ হবে।

হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের কাবাডি ভেন্যুটা আন্তর্জাতিক মানের নয়। যে কারণে, আমরা বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি আয়োজন করি শহীদ নূর হোসেন ভলিবল স্টেডিয়ামে। আমরা দলগুলোর অনুশীলনের জন্যও সেভাবে ভালো ব্যবস্থা করতে পারিনি। একেক দলকে ১ ঘণ্টা সময় দিয়েছিলাম। এক দল অনুশীলন করেছে, আরেক দল লাইনে দাঁড়িয়েছিল। যে কারণে আমরা আন্তর্জাতিক মানের ভেন্যু তৈরির জন্য কেরানীগঞ্জে একটা জায়গা দেখে এসেছি। বিষয়টি মাননীয় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল অবগত আছেন।

কেরানীগঞ্জে ৫ থেকে ৭ বিঘা জমি পাওয়ার চেষ্টা চলছে জানিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান বলেন, মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামের মতো একটি ভেন্যু তৈরির পরিকল্পনা আছে। টুর্নামেন্ট আয়োজনের পাশাপাশি যেখানে আমরা বিভিন্ন দলের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থাও করতে পারব। সেখানে ভেন্যু হলে জাতীয়, যুব ও নারী দলকে সব সময় অনুশীলনের মধ্যে রাখতে পারব।

বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কেরানীগঞ্জে জায়গা পেলে সেখানে একাডেমির মতো ভেন্যু তৈরির জন্য তো অবশ্যই সময় লাগবে। তবে এর আগে আমরা বিকল্প হিসেবে কাবাডি স্টেডিয়াম ও ভলিবল স্টেডিয়াম নিয়ে নতুন করে ভাবছি। আমরা দুই স্টেডিয়ামকে এক করে আন্তর্জাতিক মানের একটি ভেন্যু গড়ে তুলতে চাই। ভলিবল ফেডারেশন এ পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছে। দুটি ভেন্যু এক করে একটি আন্তর্জাতিক মানের ভেন্যু আমরা তৈরি করতে চাই শহীদ নূর হোসেন স্টেডিয়ামকে। তাতে কাবাডির যেমন সুবিধা হবে, তেমন সুবিধা হবে ভলিবলেও। দুই ভেন্যু এক করে মাঝে একটি পর্দা ব্যবহার করে একপাশে গেম, অন্যপাশে অনুশীলনের ব্যবস্থা করা যাবে। এই পথে এগুলে আমরা ১৬টি দেশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু কাপ এখানেই আয়োজন করতে পারব।

অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, মেয়েদের নিয়ে বঙ্গমাতা কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি আয়োজনের চিন্তাভাবনা আছে। তবে সমস্যা হলো সিডিউল পাওয়া যায় না। ফ্রি একটা সময় পেলে টুর্নামেন্ট আয়োজন করলে সেটা মানুষে দেখে। না হলে কে দেখবে? আর ছোট পরিসরে হলেও মেয়েদের নিয়ে আমরা এ বছর কর্পোরেট লিগ আয়োজন করলাম। মেয়েদের থাকা-খাওয়ার পেছনেই খরচ হয়েছে অর্ধ কোটি টাকার বেশি। দেশে নারীদের নিয়ে প্রথম কর্পোরেট লিগ তো আমরাই করলাম।

ছেলেদের ফ্র্যাঞ্চাইজি কাবাডি প্রসঙ্গে হাবিবুর রহমান বলেন, আগামী বছর মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের ফ্র্যাঞ্চাইজি কাবাডি আয়োজনেরও আমাদের পরিকল্পনা আছে। সেটা হবে ভারতের প্রো-কাবাডির আদলে। তবে, এখানে সিডিউল পাওয়ার একটা বিষয় থাকে। সুবিধাজনক সময়ে করতে না পারলে বিদেশি খেলোয়াড় পেতেও সমস্যা হবে।

বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের জাতীয় খেলা কাবাডি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা আর্জেন্টিনা, পোল্যান্ডের মতো দেশকে কাবাডিতে নামিয়েছি। আগামীতে আরও দেশ খেলবে। মিসরসহ আরও অনেক দেশ কাবাডিতে আসছে। আমরা কাবাডিকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই, যাতে অন্য দেশগুলো এসে দেখে বাংলাদেশটাই কাবাডিময়। দেখবেন এক সময় ঢাকা হবে বিশ্ব কাবাডির রাজধানী। আমরা সেই পরিকল্পনা নিয়েই কাজ করছি।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্যের বিষয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, এশিয়ার দেশগুলোই কিন্তু বিশ্ব কাবাডিতে শাসন করছে। দক্ষিণ এশিয়াতে আছে ভারত-পাকিস্তানের মতো দেশ। যে কারণে এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি। প্রতিটি দেশই আস্তে আস্তে উন্নতি করছে। আমরা দলকে শক্তিশালী করে কিভাবে সাফল্য আনা যায়, তা নিয়েই কাজ করছি।

মাঠে দর্শকের উপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, কাবাডি আমাদের জাতীয় খেলা। হতে পারে আমাদের অবস্থা ততটা ভালো না। এরপরও কিন্তু এটি দেশের জাতীয় খেলা। এই খেলার উন্নয়নে সবাইকেই সহযোগিতা করতে হবে। দর্শকও কিন্তু এই সহযোগিতার একটি অংশ।

দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কাবাডি খেলোয়াড়দের পাইপলাইন শক্তিশালী করতে যুব প্রতিযোগিতায় গুরুত্ব দিয়েছেন উল্লেখ করে হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা ইউনিয়ন থেকে শুরু করে আইজিপি কাপ আয়োজন করেছি। সেখান থেকে প্রতিভা বাছাই করে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থাও করেছি। যে কারণে জাতীয় দলে কোয়ালিটি খেলোয়াড় আসছে। এভাবেই আমরা এসএ গেমস ও এশিয়ান গেমসে ভালো ফলাফল পেতে শুরু করব।