ঢাকার কেরানীগঞ্জে রাসেল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার আসামিরা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

ঢাকার কেরানীগঞ্জে বন্ধুর নির্যাতনে বন্ধু খুনের ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে মূল হোতাসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ঢাকা, ঝিনাইদহ ও ভোলা জেলা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন (মূল হোতা) আফতাব উদ্দিন রাব্বি (২৪), আলমগীর ওরফে ঠান্ডু (৩৯), মো. আমির হোসেন (৩৮), মো. শিপন (৩১), দেলোয়ার ওরফে দেলু (৩৭), মো. রনি (৩৫), অনিক হাসান হিরা (৩০), মো. সজীব (৩৬), ফিরোজ (৩১), রাজীব আহমেদ (৩৫), মো. মাহফুজুর রহমান (৩৬) ও মো. রতন শেখ (২৮)।

ঢাকা জেলা পুলিশ জানায়, ১০ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে নিহত রাসেলকে তাঁর বন্ধু আফতাব উদ্দিন রাব্বি লোক পাঠিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার তেলঘাটে পারভিন টাওয়ারের নিচতলায় নিজ অফিসে ডেকে নিয়ে যান। রাব্বির অফিসে গেলে তাঁর অন্যান্য বন্ধু রাতভর রাসেলকে নির্যাতন করেন। একপর্যায়ে রাত ২টার দিকে রাসেল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে অচেতন অবস্থায় বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এ সময় রাসেলের স্ত্রীকে পুলিশ বা অন্য কাউকে ঘটনার বিষয়ে না জানানোর জন্য হুমকি দেয় আসামিরা।

পরদিন সকালে রাসেলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয় পরিবার। সেখানে চিকিৎসক রাসেলকে মৃত ঘোষনা করেন। রাসেল মারা যাওয়ার পর রাব্বির অফিসে তাঁকে নির্যাতনের বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত রাসেলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হাওলাদার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় আফতাব উদ্দিন রাব্বিসহ ১৩ জনের নামোল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১০–১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

মামলার পরই কাজ শুরু করে দেয় পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করে। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ ও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিও পর্যালোচনা করে আসামিদের শনাক্ত করা হয়। এরপর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা–পুলিশের একটি দল তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে ঝিনাইদহের মহেষপুর থানার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বাঁশবাড়িয়া বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে আফতাব উদ্দিন রাব্বি, সজীব, রাজীব, হীরা (৩০) ও ফিরোজকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভোলার লালমোহন থানায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় আলমগীর ওরফে ঠান্ডু, আমির, রনি, দেলোয়ার ওরফে দেলু, শিপন, মাহফুজ ও রতন শেখকে।

গ্রেপ্তার আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, নিহত রাসেল রাব্বির বন্ধু। কালীগঞ্জ এলাকায় রাসেল বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে রাব্বির নামে চাঁদা তুলতেন। কিন্তু রাসেল সেই টাকা রাব্বি ও অন্য সহযোগীদের না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন রাব্বি। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় রাসেলকে মারার জন্য রাব্বি লোকজন দিয়ে রাসেলকে তাঁর অফিসে ডেকে নেন। এরপর রাব্বি ও তাঁর সহযোগীরা মিলে সারা রাত রাসেলকে নির্যাতন করেন। একপর্যায়ে রাসেল অচেতন হয়ে পড়লে তাঁকে রাত ২টার দিকে বাসায় রেখে আসেন আসামিরা। পরদিন সকালে রাসেলকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।