ডিএমপির গোয়েন্দা অফিস কম্পাউন্ডে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার, বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মো. রবিউল ইসলাম।

বুধবার (২৪ আগস্ট) দিবাগত রাত দেড়টায় গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।

আজ বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপির গোয়েন্দা অফিস কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের কাছে ফোন করে নিজেকে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া পরিচয় দিয়ে জানান, নুহাশ পল্লীর উন্নয়নের জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে একটি বড় ফান্ড এসেছে। উক্ত ফান্ড বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। তাঁকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবের মোবাইল নাম্বার দেন এবং ওই নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেন। মেহের আফরোজ শাওন ওই মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে উপসচিব পরিচয়ে একজন কথা বলেন এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা ফান্ড ট্রান্সফারের জন্য সরকারি ট্যাক্স বা ফি বাবদ ৩১ হাজার ৮৫০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রদান করতে বলেন। তিনি সরল বিশ্বাসে ওই টাকা দেওয়ার পর পুনরায় ওই উপসচিবের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে উল্লেখিত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তখন তিনি প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন। এ ব্যাপারে নুহাশ পল্লীর ম্যানেজারের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১২ মে ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা হয়। ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।

তিনি বলেন, মামলাটি তদন্তকালে বুধবার (২৪ আগস্ট) দিবাগত রাত দেড়টায় গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানা এলাকা থেকে রবিউলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার প্রতারক রবিউল ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন কৌশলে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নম্বর সংগ্রহ করে তাঁদেরকে সংসদের ডেপুটি স্পিকার, কখনো বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব পরিচয় দিয়ে ফোন করত। বিদেশি অনুদানপ্রাপ্তির প্রলোভন দেখিয়ে সরকারি ভ্যাট ট্যাক্স ও প্রসেসিং ফি বাবদ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিত। এভাবে এই প্রতারক শতাধিক মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা রিসোর্টের মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ডিবির প্রধান বলেন, ‘অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন দিলেই যাচাই না করে কোনো লেনদেন করবেন না। কেউ ফোন করলেই সরল বিশ্বাসে টাকা পাঠাবেন না।’

ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা মামলায় রিমান্ডের আবেদনসহ গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ পিপিএম-এর দিকনির্দেশনায়, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান বিপিএম (সেবা)-এর তত্ত্বাবধানে অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক ও সহকারী পুলিশ কমিশনার জুয়েল রানার নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।