অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)। ছবি : ডিএমপি

মাস্টার কার্ড ও ভিসা কার্ডধারীদের অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহের পর অর্থ হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) গুলশান বিভাগ।

ডিএমপি জানায়, শুক্রবার ও শনিবার ঢাকা, ফরিদপুর ও সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আসামিরা হলেন মো. সোহেল মীর, মো. নাজমুল হোসেন, পারুল ও মো. তারা মিয়া।

শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে ভিসা ও মাস্টার কার্ড ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো দেশে ইলেকট্রনিক পেমেন্ট, কেনাকাটা, এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন ও মোবাইল রিচার্জসহ বিভিন্ন কাজ করা যায়। এই কার্ড ব্যবহার করে বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা লোডও করা যায়। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এসব কার্ড ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল একটি প্রতারক চক্র। এ ধরনের কয়েকটি ঘটনায় গুলশান, বনানী ও হাতিরঝিল থানায় একাধিক মামলা হয়। গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাহবুবুল হক সজীবের টিম মামলাগুলোর ছায়া তদন্ত শুরু করে।

জব্দ করা সরঞ্জাম। ছবি : ডিএমপি

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করা হয়। পরে রাজধানী ঢাকা, ফরিদপুর ও সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে সোহেল, নাজমুল, পারুল ও তারা মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, এ চক্রের এক সদস্য বিভিন্ন কার্ডধারীদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে নাজমুল ও সোহেলের কাছে পাঠাতেন। সোহেল ও নাজমুল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ব্র‍্যাক ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের কর্মকর্তা পরিচয়ে ভিসা এবং মাস্টার কার্ড ব্যবহারকারীদের নম্বরে ফোন দিয়ে তথ্য হালনাগাদ, কার্ডের পাসওয়ার্ড চার ডিজিটের পরিবর্তে ছয় ডিজিট এবং ইমেইল আপডেট না করার কারণে কার্ডের কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে বলে জানাতেন। অনেক কার্ডধারীর অ্যাকাউন্টে বড় অংকের টাকা থাকায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে প্রতারকদের কথা অনুযায়ী কাজ করতেন।

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, এভাবে সংগৃহীত তথ্য থেকে ১৬ ডিজিটের নম্বর, কার্ডের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, কার্ডের বিপরীত পাশে উল্লিখিত তিন ডিজিটের সিকিউরিটি পিন নম্বর সংরক্ষণ করতেন আসামিরা। পরে গ্রাহকদের কাছে ওটিপি কোড পাঠাতেন। কৌশলে প্রেরিত ওটিপি কোড সংগ্রহ করে বিকাশ অ্যাপে ঢুকে ‘কার্ড টু বিকাশ অ্যাড মানি’ অপশনের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করতেন।

তিনি আরও বলেন, ইতোপূর্বে বিকাশ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটলেও মাস্টার কার্ড বা ভিসা কার্ড ব্যবহারকারীদের সঙ্গে প্রতারণার বিষয় নতুন হওয়ায় অনেক ব্যবহারকারী প্রাথমিকভাবে সন্দেহ প্রকাশ করেননি। অনেকেই কার্ড স্থায়ীভাবে সাসপেন্ড হয়ে যাওয়া ও কার্ডে জমা অর্থের ক্ষতির আশঙ্কায় প্রতারকদের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই তথ্য দিয়ে দিতেন।

মাস্টার কার্ড বা ভিসা কার্ড প্রতারণায় একাধিক ধাপে কয়েকটি তথ্যের প্রয়োজন হয়। যেমন কার্ড নম্বর, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, নিরাপত্তা পিন নম্বর, ওটিপি কোড ইত্যাদি। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নিজের পাসওয়ার্ড ও ওটিপি কোড কখনোই কোনো ব্যক্তির সঙ্গে এমনকি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও শেয়ার না করার জন্য কার্ড ব্যবহারকারীদের অনুরোধ জানান তিনি।

আসামিদের রিমান্ড নেওয়ার আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।