জব্দ করা জাল টাকা ও রুপি। ছবি: ডিএমপি

রাজধানীর লালবাগ থানাধীন নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাল টাকা এবং ভারতীয় রুপি তৈরির একটি কারখানার সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) গুলশান বিভাগ। এ সময় জাল নোট উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া জাল নোট তৈরির জন্য ব্যবহৃত ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কালি, স্ক্রিন ফ্রেইম, বিশেষ ধরনের কাগজ, কেমিক্যালস, স্ক্যানার মেশিন, কাটার ও স্কেল জব্দ করা হয়।

ডিএমপি জানায়, মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সকালে অভিযান চালিয়ে আসামি জাহাঙ্গীর আলম, আলী হায়দার, তাইজুল ইসলাম লিটন ও মহসিন ইসলাম মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা সমমূল্যের জাল নোট এবং দেড় লাখ রুপি সমমূল্যের ভারতীয় জাল রুপি জব্দ করা হয়।

গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (সেবা) বলেন, রমজান মাস ও ঈদ সামনে রেখে বাজারে জাল নোট ছড়িয়ে দিচ্ছে একটি চক্র, এমন তথ্য পেয়ে নজরদারি বাড়ায় পুলিশ। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, জাল নোটের কারবারি জাহাঙ্গীর আলম একটি চালান সংগ্রহ করতে নাটোর থেকে ঢাকায় আসছেন। তাঁকে অনুসরণ করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাঁর অবস্থান শনাক্ত করে মঙ্গলবার নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধ এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ভবনে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি আরও জানান, আসামিদের উদ্দেশ্য ছিল পবিত্র রমজান মাসের আগে ও মাঝে বিপুল পরিমাণে জাল নোট তৈরি করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া। তাঁদের বিরুদ্ধে জাল নোট-সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে।

জব্দ করা সরঞ্জাম। ছবি: ডিএমপি

মশিউর রহমান বলেন, অষ্টম শ্রেণি পাস করা আসামি লিটন এই কারখানার মূল পরিচালক। তিনি নীলক্ষেত এলাকায় কম্পিউটারের দোকানে গ্রাফিক্সের কাজ করতেন। সেই সুবাদে বিভিন্ন ধরনের জাল কাগজপত্র, দলিল, জাল টাকা ও রুপি বানাতে দক্ষ তিনি। বিশেষ ধরনের কাগজ কিনে জোড়া লাগানো, কাগজে বঙ্গবন্ধু বা গান্ধীর ছবি স্ক্রিন প্রিন্টিং এবং জলছাপ দেওয়া রঙের কাজেও বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে লিটনের। জাল টাকার নিরাপত্তা সুতা জোড়া লাগানো হয় আইকা বা অন্য গাম দিয়ে। বঙ্গবন্ধু বা গান্ধীর ছবি মূল টাকা থেকে স্ক্যান করে পেনড্রাইভে রাখতেন লিটন। নিরাপত্তা সুতা তৈরির জন্য ডায়াস কেনা হতো। জলছাপ দেওয়া হলে দুটি বিশেষ ধরনের কাগজ জোড়া দিয়ে শুকানো হতো। এরপর টাকা প্রিন্টিংয়ে নেওয়া হতো। এসব কাজে সহযোগিতা করতেন আরেক আসামি আলী হায়দার। এ ছাড়া জাল নোট বান্ডিল আকারে বড় ডিলারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজও করতেন তিনি।

গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, লিটনের কাছ থেকে জাল টাকা কিনতেন জাহাঙ্গীর ও মহসিন। পরে সেগুলো অন্য জায়গায় বিক্রি করতেন। জাহাঙ্গীর নওগাঁ, নাটোর, বগুড়াসহ দেশের উত্তর এবং পশ্চিমাঞ্চলের ডিলারের মাধ্যমে এই জাল টাকা ও রুপি বিক্রি করতেন। এরপর খুচরা বিক্রেতারা বিভিন্ন শহরের ব্যস্ততম এলাকায় কেনাকাটার সময় আসল টাকার ভেতরে জাল টাকা ঢুকিয়ে দিতেন।