পুলিশি হেফাজতে আসামিরা। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে অপ্রাপ্তবয়স্ক তরুণীদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ফাঁস করে ব্ল্যাকমেলিং এবং সেসব ভিডিও দেশে-বিদেশে কেনাবেচার অভিযোগে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ সময় চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক তরুণীদের কয়েক হাজার নগ্ন ছবি ও ভিডিও এবং ১১টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

জব্দ করা মোবাইল ফোন। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

সোমবার (২২ মে) সিআইডির প্রধান অ্যাডিশনাল আইজি মোহাম্মদ আলী মিয়া বিপিএম, পিপিএম এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। চক্রটি এসব ভিডিও দেশ-বিদেশে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছে।

আসামিরা হলেন মো. আবু সায়েম ওরফে মার্ক সাকারবার্গ (২০), মো. মশিউর রহমান শুভ (২৬), মো. সাহেদ খান (২২), কেতন চাকমা (২০), মো. নাজমুল হাসান সম্রাট (২২), মো. মারুফ হোসেন (৩৪), শাহরিয়ার আফসান অভ্র (২৪), জুনাইদ বোগদাদী শাকিল (২০) ও মো. জসীম উদ্দিন (৩৮)।

সিআইডির প্রধান অ্যাডিশনাল আইজি মোহাম্মদ আলী মিয়া বিপিএম, পিপিএম জানান, পমপম নামের একটি টেলিগ্রাম গ্রুপের অ্যাডমিনরা অপ্রাপ্তবয়স্ক তরুণীদের গোপন ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নিয়ে ব্ল্যাকমেল করছে এবং টাকা দাবি করছে বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন তরুণী। টাকা দিতে না পারলে ভিডিও কলে এসে আপত্তিকর কর্মকাণ্ড করতে বাধ্য করছেন গ্রুপের অ্যাডমিনরা। তাঁদের প্রস্তাবে রাজি না হলে ভুক্তভোগীদের পরিচয় ও ব্যক্তিগত তথ্য বিভিন্ন টেলিগ্রাম গ্রুপে ভাইরাল করে দিচ্ছেন। এমন অভিযোগ পেয়ে নজরদারি শুরু করে সিআইডি। পরে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সিআইডির প্রধান জানান, মাসে এক থেকে দুই হাজার টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, পর্তুগাল, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডের মতো দেশের অসংখ্য ক্রেতা গ্রুপটির সদস্য হয়েছেন। চক্রের সদস্যরা অল্প বয়সী মেয়েদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও সংরক্ষণ করে রাখতেন। চক্রটির নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রামের বাসিন্দা মার্ক সাকারবার্গ ওরফে মো. আবু সায়েম। শ্যামলী পলিটেকনিক থেকে ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন তিনি। তাঁর অ্যাকাউন্টে কোটি টাকার বেশি লেনদেনের তথ্য মিলেছে।

তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে মার্ক সাকারবার্গ পমপম গ্রুপের সব চ্যানেল ও গ্রুপের অ্যাডমিনদের প্রকৃত নাম-পরিচয় প্রকাশ করেন। ওই অ্যাডমিনদের কাজ ছিল তাঁর জন্য নতুন নতুন কনটেন্ট সংগ্রহ করা। এ জন্য ভুয়া ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম আইডি বানিয়ে ভুক্তভোগীদের আইডি হ্যাক করতেন তাঁরা। কখনো কখনো ভুক্তভোগীদের সাবেক প্রেমিকেরা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও গ্রুপে সরবরাহ করতেন। এরপর সেসব ছবি ও ভিডিওতে মিউজিক বসিয়ে ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ডের প্রোমো আপলোড করতেন গ্রুপে। পুরো ভিডিও দেখতে এক থেকে দুই হাজার টাকায় প্রিমিয়াম সার্ভিস কেনা লাগত ব্যবহারকারীদের।

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মার্ক সাকারবার্গ ওরফে সায়েম, অভ্র ও শাকিলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম থেকে ডিটিআর শুভ ওরফে মশিউর রহমান ও জসীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মশিউরের তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানী থেকে ক্যাকটাস ওরফে কেতন চাকমা, এল ডোরাডো ওরফে শাহেদ, সূর্য ওরফে মারুফ ও মিঞা ভাই ওরফে নাজমুল সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন সিআইডির প্রধান অ্যাডিশনাল আইজি মোহাম্মদ আলী মিয়া বিপিএম, পিপিএম। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

তিনি আরও জানান, মার্ক সাকারবার্গ ও তাঁর সহযোগীদের গ্রুপ ও চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা প্রায় সোয়া চার লাখ। আর সেগুলোতে ২০ হাজার আপত্তিকর ভিডিও এবং প্রায় ৩০ হাজার কন্টেন্ট রয়েছে। অন্যদিকে মাসে ১ থেকে ২ হাজার টাকা ফি দিয়ে তাঁদের প্রিমিয়াম গ্রুপের সদস্য হয়েছেন দেশ-বিদেশের প্রায় ৭৫০ জন ব্যক্তি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী অনেক কিশোরী ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।

আসামিদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।