মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদন করে অন্য দেশকে দেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে।

সোমবার সংসদের সাধারণ আলোচনায় সাম্প্রতিক বিদেশ সফরের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমাদের যে সাফল্য, তা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। আমি এটাও বলে এসেছি, আমরা নিজেরা ভ্যাকসিন তৈরি করতে চাই। ভ্যাকসিন তৈরি করার যে বাধাগুলো আছে, সেগুলো আপনাদের সরিয়ে দিতে হবে।’
করোনাভাইরাসের টিকা যেন সর্বজনীন হয়, সেই আহ্বান বিশ্বনেতাদের জানানোর বিষয়টি তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, ‘উন্মুক্ত করতে হবে। এটা জনগণের প্রাপ্য। জনগণের সম্পদ হিসেবে দিতে হবে। সারা বিশ্বে কোনো মানুষ যেন ভ্যাকসিন থেকে দূরে না থাকে।’

‘আমাদেরকে সুযোগ দিলে আমরা উৎপাদন করব। আমরা বিশ্বে দিতে পারব। সে সক্ষমতা আমাদের আছে। জমিও নিয়ে রেখেছি। এভাবে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’ খবর বিডিনিউজের।
গ্লাসগোতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন এবং প্যারিসে ইউনেসকোর ৭৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে দুই সপ্তাহের সফর শেষে রোববার সকালে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।

১২ নভেম্বরে প্যারিসে ইউনেসকো সদর দপ্তরে সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য ‘ইউনেসকো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রস্তাবে গত বছরের ডিসেম্বরে ইউনেসকো নির্বাহী পরিষদের শরৎকালীন অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক এই পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বঙ্গবন্ধুর নামে জাতিসংঘের কোনো অঙ্গ সংস্থার প্রবর্তন করা প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার এটি।

বঙ্গবন্ধুর নামে পুরস্কার চালু করায় সংসদের আলোচনায় ইউনেসকোকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। সাধারণ আলোচনায় স্বাধীনতার পর দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে জাতির পিতার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর আমরা কী দেখেছি? ১৯টা ক্যু হয়েছে। হাজারো সেনাবাহিনীর অফিসার ও সৈনিক, বিমানবাহিনীর অফিসার ও সৈনিক এবং সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। কারাগারে ফেলে রাখা হয়েছে, নির্যাতন চলেছে। গুলি-অস্ত্র, দুর্নীতি- এটাই ছিল জননীতি। এর বাইরে একটা দেশকে যে উন্নত করা যায়, সেদিকে কোনো আন্তরিকতাই আমরা দেখিনি। আমি বাংলাদেশে আসার পর কী দেখেছি? বিজ্ঞান পড়েই না মানুষ। এই অবস্থা! বিজ্ঞানের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। গবেষণা তো ছিলই না। কোনো বিশেষ বরাদ্দও ছিল না।’

১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা পিছিয়ে নেই। আমি ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের জনগণকে। তারা বারবার আমায় ভোট দিয়েছে। সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। এক দশকের ভেতরে বাংলাদেশের পরিবর্তন সারা বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশের কাউকে বাইরে গিয়ে কথা শুনতে হয় না।’
সংসদ নেতা বলেন, ‘ভালো কাজটা চোখে না দেখলে আমাদের কিছু বলার নেই। আমাদের যে সিআরআই আমরা তৈরি করেছি। সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন- এটা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটা গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটা ২০০১ সালে অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে খালেদা জিয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা পুনরায় চালু করি। সেখান থেকে ইয়াংবাংলা নামে একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়। যুবসমাজকে উৎসাহিত করা। তাদেরকে স্টার্টআপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তাদেরকে এটাও বলা হয়, শুধু চাকরির পেছনে ঘুরবে কেন, চাকরি দেবার যোগ্যতা অর্জন করবে। নিজের পায়ে দাঁড়াবে। নিজের ব্যবসা করবে, নিজেরা অন্যকে চাকরি দেবে। এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আমাদের সরকারের আমলে।’