বিট পুলিশিং সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম বলেছেন, ‘আমি শেরপুর জেলায় যোগদান করে জুয়া ও মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। মাদকের সাথে কারও কোনোভাবে সম্পৃক্ততা থাকবে না, সেটা পুলিশ সদস্য হোক, রাজনৈতিক কিংবা অন্য যে কেউ।’

শেরপুরের শ্রীবরদী থানার লংগরপাড়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ৪ ডিসেম্বর (রোববার) শ্রীবরদী থানা-পুলিশের আয়োজনে সচেতনতামূলক বিট পুলিশিং সমাবেশে এ কথা বলেন পুলিশ সুপার। ‘বিট পুলিশিং বাড়ি বাড়ি, নিরাপদ সমাজ গড়ি’ স্লোগান সামনে রেখে ইভ টিজিং, মাদক, নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, পানিতে ডুবে এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অপমৃত্যু প্রতিরোধে এই সমাবেশ হয়।

বিট পুলিশিং সমাবেশে শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএমকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

শ্রীবরদী থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে বিট পুলিশিং সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম।

পুলিশ সুপার তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানসহ ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারী বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ও অন্যদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, একটি স্বাধীন দেশের মানচিত্র উপহার দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সেই স্বপ্ন রূপান্তরের পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। ভিশন ২০৪১ বিনির্মাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একত্রে এগিয়ে চলেছি। এই উন্নতিতে বাধা হয়ে আসছে বিভ্রান্তকারী কিছু দুষ্ট চক্র। আমি অনুরোধ করব, আপনারা এই দুষ্ট চক্রের ফাঁদে পা দেবেন না। তার মধ্যে একটি হলো সর্বনাশা মাদক। আমাদের অবশ্যই মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে।

সমাবেশস্থলে পৌঁছালে পুলিশ সুপারকে ফুল ছিটিয়ে বরণ করা হয়। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের এখানে আরেকটি সমস্যা আছে, যে সমস্যাটা সর্বজনীন। এই সমস্যা থেকে আমাদের মা-বোনকে সচেতন করতে হবে। এটা হলো বাল্যবিবাহ। আপনারা জানেন, শিক্ষিত জাতি গঠনে শিক্ষিত মায়ের ভূমিকা অপরিহার্য।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, একটা জিনিস আমাকে খুব পীড়া দেয়, তা হলো শেরপুর জেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হ‌য়ে সর্বাধিকসংখ্যক লোকের মৃত্যু হয়। এ বিষয়টা নিয়ে আমরা কাজ করছি, ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছি। কী কারণে, দোষটি কার, যে মারা গেল তার বা তার পরিবারের নাকি আমাদের সবার, জানার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় শেরপুরে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটে। শিশুগুলোকে রক্ষা করার দায়িত্ব কিন্তু আমাদের। আমি চাই না যে আর একটি শিশুও এভাবে তার পরিবারের অবহেলায় মারা যাক। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন শ্রীবরদী থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার বিশ্বাস। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

সমাবেশ আয়োজন প্রসঙ্গে শেরপুরের পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশিং সেবাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া, সেবার কার্যক্রমকে গতিশীল ও কার্যকর করা এবং পুলিশের সাথে প্রান্তিক জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের এই আয়োজন। তিনি যেকোনো ধরনের অপরাধ সম্পর্কে তথ্য জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ বা জেলা পুলিশের হটলাইন নম্বরে ফোন করে জানানোর আহ্বান জানান।
সমাবেশে উপস্থিত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

সমাবেশে শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) সোহেল মাহমুদ পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নালিতাবাড়ী সার্কেল) আফরোজা নাজনীন, শ্রীবরদী উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যান এডিএস শহিদুল ইসলাম, খড়িয়া কাজির চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়া, জেলা পরিষদ সদস্য মাহমুদুল হাসান মুক্তা, খড়িয়া কাজির চর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল খালেকসহ স্থানীয় জনসাধারণ, জনপ্রতিনিধি, স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম, সনাতন ধর্মাবলম্বী, স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।