নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানা-পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার কয়েকজন জুয়াড়ি। ছবি: পুলিশ নিউজ

জুয়াড়িদের আতঙ্ক হয়ে উঠেছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানা-পুলিশ। বাঁশঝাড়, ভুট্টাখেত, বালুর স্তূপ, শ্মশানসহ ছয়টি জায়গায় অভিযান চালিয়ে গত দেড় মাসে এক ইউপি সদস্যসহ ৩০ জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৮ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও অপর ২২ জুয়াড়ির নামে জুয়া আইনে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ থানার ওসি দেড় মাসে ৩০ জুয়াড়ি গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে বলেন, ‘জুয়ামুক্ত কিশোরগঞ্জ গঠনে টিম কিশোরগঞ্জ থানা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জুয়াড়িরা কোথায় জুয়া খেলছে, রাত হোক আর দিন হোক, আমাদের খবর দিন। তাঁদেরকে আইনের আওতায় আনার দায়িত্ব আমাদের।’

থানা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় জুয়া খেলার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে থানায় আসছে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জুয়ামুক্ত কিশোরগঞ্জ গঠনে টিম কিশোরগঞ্জ থানা-পুলিশ কাজ শুরু করে।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের চম্পাফুল হাজিপাড়ায় ৩ এপ্রিল গভীর রাতে ফাঁকা জায়গায় জমির মাঝে আলো জ্বালিয়ে জুয়া খেলা অবস্থায় অভিযান চালিয়ে ৫ জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন আসাদুল ইসলাম (৩৮), ছাদেকুল ইসলাম (৩৬), মনছুর আলী (৪৪), লাল মিয়া (৪২) ও আব্দুল জলিল (৩৮)। তাঁদের সবার বাড়ি গাড়াগ্রাম ইউনিয়নে। তাঁদের বিরুদ্ধে জুয়া আইনে মামলা করে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

অপরদিকে ১৪ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ উপজেলার রনচন্ডি ইউনিয়নের বদি মাঝাপাড়ার একটি বাঁশঝাড়ে রাতে তাস খেলা অবস্থায় গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাকারুল ইসলামসহ ৫ জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত অন্য জুয়াড়িরা হলেন রণচন্ডী বদি মাঝাপাড়ার আরকান (৩৫), একই গ্রামের বাবু মিয়া (২৭), মাহবুবুল ইসলাম (২৮) ও গঙ্গাচড়া উপজেলার মোহনা গ্রামের একরামুল হক(৫২)। তাঁদেরও জুয়া আইনে মামলা করে জেলা কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

অন্যদিকে ১ মে উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের সিঙ্গেরগাড়ী পাঠানপাড়া গ্রামের বাঁশঝাড়ে টর্চের আলো দিয়ে জুয়া খেলা অবস্থায় ৯ জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন উত্তর সিঙ্গেরগাড়ী পাঠানপাড়া গ্রামের আজগার আলী (৫০), আলম হোসেন (৫৫), বাতেন মিয়া (৪৮), দক্ষিণ সিঙ্গেরগাড়ী চওড়াপাড়ার সবুজ মিয়া (২৭), কামরুল ইসলাম (২৪), দক্ষিণ সিংগেরগাড়ী পোদ্দারপাড়া গ্রামের এরশাদুল ইসলাম (২৫), লেলিন মিয়া (২৫), দক্ষিণ সিঙ্গেরগাড়ী পেয়াদাপাড়ার ফুল চাঁদ মিয়া (৪৮) ও দক্ষিণ সিঙ্গেরগাড়ী তেলিপাড়া গ্রামের সবুজ মিয়া (২৬)।

এ ছাড়া গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেশবা যুগীপাড়ার একটি ভুট্টাখেতের পাশে রক্ষিত বালুর স্তূপের নিচে ৪ মে অভিযান চালিয়ে টর্চের আলো ও মোমবাতি জ্বালিয়ে জুয়া খেলারত অবস্থায় তিন জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মোজাম্মেল হক (৩৫), আনিসুর রহমান (৩৩) ও লেবু মিয়া (৪৫)। সবার বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের কেশবা জুগিপাড়ায়। তাঁদের সবাইকে জুয়া আইনে মামলা করে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

অপরদিকে ৮ মে উপজেলার গাড়াগ্রাম ধাইজানপাড়ায় শ্মশানে জুয়া খেলা অবস্থায় ৬ জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের প্রত্যেককে ভ্রাম্যমাণ আদালত এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

গ্রেপ্তার ও দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন উত্তর পুষনা কাচারিপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর (২৯), উত্তর পুষনা মাছুয়াপাড়া গ্রামের ইঞ্জু (৩৫), একই গ্রামের ময়জাল হোসেন (৫০), হেদায়েত উল্লাহ (১৯), উত্তর পুষনা দর্জিপাড়া গ্রামের শওকত আলী (৪৫), দক্ষিণ রাজীব কাচারিপাড়া গ্রামের মোশাররফ (৫৫।

অন্যদিকে পরের দিনই উপজেলার উত্তর দুরাকুটি জয়নন কোট গ্রামের একটি বাঁশঝাড়ে অভিযান চালিয়ে জুয়া খেলারত অবস্থায় দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি গ্রামের বাবু মিয়া (২৫) ও সোহানুর রহমান সোহান (২৩)। এ দুজনকেও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নূর-ই-আলম সিদ্দিকী ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাজীব কুমার রায় বলেন, ‘আমরা টিম কিশোরগঞ্জ থানা জুয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কাজ করছি। জুয়ামুক্ত কিশোরগঞ্জ গঠনে যা যা পদক্ষেপ নেয়া দরকার, আমরা ইতোমধ্যে নিয়েছি। আগামীতে জুয়ামুক্ত স্মার্ট কিশোরগঞ্জ হবে, সে প্রত্যাশায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’