র‌্যাবের হেফাজতে জামাতুল আনসারের গ্রেপ্তার ৩ সদস্য। ছবি; সমকালের।

জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র শুরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিবসহ তিনজনকে অস্ত্র, ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

সোমবার রাতে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। খবর সমকালের।

গ্রেপ্তার অপর দুজন হলেন জাকারিয়া হোসাইন ও আহাদুল ইসলাম মজুমদার ওরফে সিফাত ওরফে মামিদ। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এতে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে, নতুন জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম শুরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন রাকিব আরও কয়েক সদস্যসহ গাজীপুর হয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুরের দিকে যাচ্ছেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার রাতে র‍্যাব-১ ও ৭ এর যৌথ দল গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় আশপাশে থাকা তাঁদের কিছু সদস্য পালিয়ে যান। অভিযানে উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল, ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ উগ্রবাদী লিফলেট।

তিনি জানান, গ্রেপ্তার রাকিব ২০১৫ সালে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে অবস্থানকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ এক জঙ্গির মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। পরে ২০১৬ সালে দেশে ফিরে আনসার আল ইসলামে যোগ দেন। পাশাপাশি গার্মেন্টস পণ্যের ব্যবসা শুরু করেন। জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া প্রতিষ্ঠার সময় থেকে তিনি সংগঠনের অর্থ সংগ্রহ ও সরবরাহসংক্রান্ত কার্যক্রম এবং সমতলের যাবতীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করতেন। আনসার আল ইসলাম থেকে পাওয়া প্রায় ১৫ লাখ টাকা তাঁর কাছে জমা ছিল। তিনি রাজধানীর মুগদা এলাকায় থাকাকালে হিজামা সেন্টারের আড়ালে সাংগঠনিক বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। ঢাকায় সকল শুরা কমিটির মিটিং তাঁর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো। ইতোপূর্বে গ্রেপ্তার সংগঠনের শুরা সদস্য মায়মুনসহ অন্যরা দেশ-বিদেশ থেকে সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে তাঁর কাছে জমা রাখতেন। তিনি সংগঠনের অর্থায়নে মুন্সিগঞ্জে গবাদিপশুর খামার স্থাপন করেছেন। তথাকথিত হিজরত করা অধিকাংশ সদস্য তাঁর খামারে বিভিন্ন সময়ে অবস্থান করতেন এবং তাঁদের শারীরিক কসরত ও তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করতেন।

খন্দকার আল মঈন আরও জানান, মোশারফ হোসেন সংগঠনের আমীর মাহমুদের নির্দেশনায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, অস্ত্র, রসদ কেনাসহ সংগঠনের অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য অর্থ সরবরাহ করতেন এবং শুকনা খাবারসহ পাহাড়ে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে পার্বত্য প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠাতেন। এ ছাড়া স্বেচ্ছায় নিরুদ্দেশ সদস্যদের পাহাড়ে পাঠানোর সামগ্রিক কার্যক্রম তিনে তত্ত্বাবধান করতেন। তিনি বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ পরিচালনা ও সাংগঠনিক কাজে পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ শিবিরে গেছেন বলে জানা যায়। পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান শুরু হলে সংগঠনের আমীর মাহমুদের নির্দেশনায় সে সমতলের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থেকে তিনি সংগঠনের অন্যান্য আত্মগোপন করা সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সংগঠিত করার চেষ্টা করতে থাকেন।

তিনি আরও জানান, মোশারফ হোসেন ইতোপূর্বে আনসার আল ইসলামের সদস্য থাকায় ওই সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় রাখতেন। তিনি আনসার আল ইসলামের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন বলে জানা যায়। পাহাড় থেকে পালানোর সময় তাঁর কাছে সংগঠনের ২০ লক্ষাধিক টাকা জমা ছিল। যার মধ্যে সংগঠনের বিভিন্ন কাজে ইতোমধ্যে ৭ লক্ষাধিক টাকা খরচ করেছে বলে জানা যায়। তিনি গ্রেপ্তার দুই সদস্যকে নিয়ে গাজীপুর হয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুরের জঙ্গল এলাকায় অবস্থান করে সংগঠনের আত্মগোপন করা অন্য সদস্যদের একত্র করে আমীরের নেতৃত্বে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন বলে জানা যায়।

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার জাকারিয়া ২০০৮ সালে স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে হিফজ সম্পন্ন করে ফরিদপুরে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০২১ সালে সংগঠনের শুরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান রাকিবের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগ দেন। তাঁর পরিবারকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে যাওয়ার কথা বলে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। পরে ২০২২ সালের প্রথম দিকে তিনি রাকিবের মাধ্যমে বান্দরবানের থানচি ও বাকলাইপাড়া হয়ে কেটিসিতে যায়। তিনি পাহাড়ে যাওয়ার পর অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন ধরনের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান শুরু হলে তিনি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ত্যাগ করে সমতলে আসেক এবং সমতলের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন। পরে সংগঠনের আমীরের নির্দেশে রাকিবের সঙ্গে সংগঠনের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করা সদস্যদের একত্র করার জন্য টাঙ্গাইলের মধুপুরের জঙ্গল এলাকায় যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার হন।

অপর জঙ্গি আহাদুল কুমিল্লার একটি কলেজে অনার্স ৪র্থ সেমিস্টারে অধ্যয়নরত। তিনি ২০১৮ সালে এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গেলে সংগঠনের আমীর মাহমুদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পরে তাঁর মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করেন। তিনি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। প্রথমে তিনি প্রায় দুই মাস আমীর মাহমুদের বাসায় অবস্থান করেন এবং আমীরের ব্যক্তিগত সহযোগী ছিলেন। পরবর্তী সময়ে মাহমুদের মাধ্যমে বান্দরবানের থানচি হয়ে কেটিসিতে যান। পাহাড়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন অস্ত্র চালনা, বোমা তৈরিসহ সেই সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হলে তিনি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ত্যাগ করে সমতলে আসেন এবং সমতলের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন। পরবর্তীতে সংগঠনের আমীরের নির্দেশে রাকিবের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকা সদস্যদের একত্র করার জন্য টাঙ্গাইলের মধুপুরের জঙ্গলে যাচ্ছিলেন।