মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি : সংগৃহীত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান। খবর বাসসের।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৫ আগস্ট এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। ১৯৭৫ সালের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ঘাতক চক্রের নির্মম বুলেটের আঘাতে ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে শাহাদতবরণ করেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একই সঙ্গে শহীদ হন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ অনেক নিকটাত্মীয়।

জাতির পিতার ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে তিনি ১৫ আগস্টের সব শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা ও মহান স্বাধীনতার রূপকার। ১৯৪৮ সালে ভাষার দাবিতে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বসহ বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আটান্নর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, বাষট্টির গণবিরোধী শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং সত্তরের নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। এ জন্য তাঁকে বারবার কারাবরণ করতে হয়।

আবদুল হামিদ বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার ও স্বাধিকারের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপসহীন। ফাঁসির মঞ্চেও তিনি বাংলা ও বাঙালির জয়গান গেয়েছেন। তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু অসমসাহসিকতার সঙ্গে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে লাখো মানুষের উদ্দেশে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, যা ছিল মূলত স্বাধীনতারই ডাক। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং তাঁরই নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি বিজয় অর্জন করে।

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আজ অভিন্ন সত্তায় পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজীবন সাম্য, মৈত্রী, গণতন্ত্রসহ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। তিনি ছিলেন বিশ্বে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের স্বাধীনতার প্রতীক, মুক্তির দূত। বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর নীতি ও আদর্শ বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতাকামী মানুষের অধিকার আদায়ে এবং শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণজাগরণে সব সময় অনুপ্রেরণা জোগাবে। ঘাতক চক্র জাতির পিতাকে হত্যা করলেও তাঁর নীতি ও আদর্শকে মুছে ফেলতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু এ দেশের লাখো-কোটি বাঙালিরই শুধু নন, বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্যও প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবেন।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর স্বপ্ন। এ লক্ষ্যে স্বাধীনতার এক বছরের মাথায় প্রণয়ন করেন একটি গণমুখী সংবিধান। বঙ্গবন্ধু শুধু একটি দেশই উপহার দেননি; তিনি সদ্য স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামো কেমন হবে, এরও একটি যুগোপযোগী রূপরেখা প্রণয়ন করেছিলেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সব সময় জনগণের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখতেন। উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতা অর্জনে মানুষের ঐক্যবদ্ধ ও যৌথ প্রচেষ্টাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। বঙ্গবন্ধুর দেখানো সেই পথে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে স্বনির্ভর দেশ গড়ার লক্ষ্যে। দেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে তিনি ঘোষণা করেছেন ‘রূপকল্প ২০৪১’। বাংলাদেশের উন্নয়নের অনন্য মাইলফলক পদ্মা সেতু ইতিমধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ আরও কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ খুব শিগগির শেষ হবে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সূচিত হবে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হবে জ্ঞান-গরিমায় সমৃদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ কাজকে সম্পূর্ণ করে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। তাহলেই চিরঞ্জীব এই মহান নেতার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হবে।’