চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের জেরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। খবর আজকের পত্রিকার।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম ও আবাসিক হলসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ৬ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি থাকবে। খুলবে আগামী ১৭ জুলাই। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ডিন, ইনস্টিটিউট পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় প্রধান, প্রভোস্ট এবং ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের সমন্বয়ে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদের আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে ও ছাত্রীদের আগামীকাল সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম বলেন, ‘চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আজকে আমরা হল ভ্যাকেন্ট দিতে বাধ্য হয়েছি।’ 

এর আগে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারি ও সশস্ত্র অবস্থানের কারণে গতকাল সোমবার দিনভর ক্যাম্পাসজুড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে। এরপর রাতে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যায়। এতে পরিস্থিতি আরও ভীতিকর হয়ে ওঠে। 

এই অবস্থায় অঘটনের আশঙ্কায় রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনোয়ার হোসেন শামীম, রাউজান মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন, চুয়েটের প্রক্টর অধ্যাপক ড. রেজাউল করিমসহ সংশ্লিষ্টরা চুয়েটের স্বাধীনতা চত্বরে রাতভর অবস্থান করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। 

সোমবার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী চুয়েটের ১২টি বিভাগের ২ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করেন। শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জেরে নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

এদিকে গতকাল সোমবার বিকেল ৪টায় বিবদমান দুই পক্ষের এক গ্রুপ মিছিল বের করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার মুখে পিছু হটে। তবে দুই পক্ষই যার যার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিজেদের সশস্ত্র অবস্থান অব্যাহত রাখে। সন্ধ্যার পর থেকে বহিরাগতদের আনাগোনাও লক্ষ করা গেছে বলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান। 

সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, রাত ৯টার পর থেকে ক্যাম্পাসে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেছে। এতে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী ও আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। 

এ সময় এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম, ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন ও চুয়েটের প্রক্টর রেজাউল করিমসহ সংশ্লিষ্টরা চুয়েটের স্বাধীনতা চত্বরে ছুটে আসেন। তাঁরা বলেন, শব্দগুলো গুলির ছিল না। বিবদমান দুই গ্রুপ পটকা (বাজি) ফাটিয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পরিস্থিত এখন স্বাভাবিক রয়েছে। 

এদিকে শেখ রাসেল হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা গতকাল সোমবার চুয়েট থেকে ছেড়ে যাওয়া বিকেল ৫টার গাড়িতে ড. কুদরাত-এ-খুদা হলের শিক্ষার্থীদের উঠতে দেয়নি। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা দায়িত্বরত শিক্ষকদের প্রকাশ্যে গালাগাল করেন। 

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. রফিকুল আলম বলেন, যারা এভাবে দিনদুপুরে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে এবং শিক্ষকদের গালিগালাজ করে, তারা কেউ সুস্থ মস্তিষ্কের নয়। এ ঘটনায় বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট সৈয়দ মাসরুর আহমেদকে প্রধান করে ৪ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জড়িতদের সবাইকে বিচারের সম্মুখীন করা হবে।