প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শনিবার সকালে গভবনে সাক্ষাৎ করেন ডব্লিউএইচএফের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডা. জগৎ নরুলা। ছবি: পিআইডি।

মৌলিক চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা এবং দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের (ডব্লিউএইচএফ) সহযোগিতা চেয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর মৌলিক গবেষণা পরিচালনায় আমাদের সহায়তা করুন এবং আমাদের জনশক্তি বিকাশে অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ দিন।’

আজ শনিবার সকালে গণভবনে ডব্লিউএইচএফের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডা. জগৎ নরুলার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই অনুরোধ জানান। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।

দেশের সার্বিক উন্নয়নে মৌলিক গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নতির জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর গবেষণায় অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

এই সরকারের আমলে কৃষি খাতে গবেষণার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ দুধ, মাংস ও মাছ উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ কৃষি খাতে বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনে প্রধানত গবেষণার অবদান রয়েছে।’

স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়াই সরকারের প্রধান লক্ষ্য উল্লেখ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি সারা দেশে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র স্থাপন শুরু করেন। কিন্তু তিনি তাঁর কাজ শেষ করতে পারেননি। কারণ, ১৯৭৫ সালে তাঁকে পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যসহ হত্যা করা হয়েছিল।’

জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন শুরু করা হয় বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি জোট সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে সরকার আবার ক্লিনিক স্থাপন শুরু করে। এখন সারা দেশে ১৮ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে।’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে মানুষ বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ পাচ্ছেন। অসচ্ছল ও দরিদ্র ডায়াবেটিস রোগীরাও বিনা মূল্যে ইনসুলিন পাচ্ছেন।

সরকারপ্রধান জানান, তাঁরা চিকিৎসাবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য ইতিমধ্যে বিভাগীয় সদরে পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং প্রতি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা পরিকল্পনায় আছে।

ডব্লিউএইচএফের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জগৎ নরুলা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের প্রশংসা এবং এই অগ্রগতিকে ‘আকর্ষণীয় অগ্রগতি’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অসংখ্য প্রতিভাবান চিকিৎসক রয়েছেন, যাঁদের দক্ষতা বাড়াতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রয়োজন। আমি আগামী জানুয়ারিতে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছি এবং হৃদরোগ নিয়ে প্রথমে বাংলাদেশ, ভারত ও মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে কাজ করার লক্ষ্য রয়েছে।’

বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রায় ৫০ শতাংশ মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক রোগ, যার মধ্যে ১৭ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী হৃদরোগ।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর কার্ডিওভাসকুলার ইন্টারভেনশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুর রহমান, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার মো. (অব.) আবদুল মালিক, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী অধ্যাপক চৌধুরী হাফিজ আহসান, অধ্যাপক এমজি আজম ও অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।