পুলিশি হেফাজতে দুই আসামি। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় শিশু ইফতেকার (৭) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় জড়িত দুই শিশুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পিবিআই জানায়, পাঁচ মাস আগে ভুক্তভোগী ইফতেকার মালেকুল মাসফিকে (৭) চরণদ্বীপ দরবার শরীফের আল্লামা শাহ অছিয়র রহমান মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানায় ভর্তি করায় পরিবার। মাদ্রাসার হেফজ খানার আবাসিক শিক্ষার্থী ছিল সে। গত ৫ মার্চ সকালে মাদ্রাসার শিক্ষক জাফর আহাম্মদ ভুক্তভোগীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি পরিবারকে জানান। পরে পরিবারের লোকজন মাদ্রাদায় এসে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এক পর্যায়ে মাদ্রাসার স্টোর রুমে থেকে কম্বলে মোড়ানো অবস্থায় ইফতেকারের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মামা বোয়ালখালী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি বহুল আলোচিত হওয়ায় গত ১৬ মার্চ তদন্তের দায়িত্ব পায় চট্টগ্রাম জেলা পিবিআই। তদন্তের এক পর্যায়ে গত শনিবার (১৮ জুন) ওই মাদ্রাসায় যায় পিবিআই। সেখান থেকে হেফজ বিভাগের সব শিক্ষার্থীকে পিবিআই কার্যালয়ে এনে পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ইফতেকারকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের নাম প্রকাশ করে শিশু আমান (ছদ্মনাম) ও শিশু জামান (ছদ্মনাম)। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযুক্ত আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) ও আহাদকে (ছদ্মনাম) (১৫) জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে তাঁরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে তাঁদেরকে হেফাজতে নেয় পিবিআই।

হত্যাকাণ্ডের কারণ প্রসঙ্গে অভিযুক্তরা জানায়, হেফজখানা মাদ্রাসাটি ভুক্তভোগী ইফতেকারের বাড়ির পাশে অবস্থিত। প্রায়ই বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার পাঠানো হতো ইফতেকারের জন্য। প্রায়ই সে খাবার খেয়ে ফেলত তাঁরা। বিষয়টি নিজের বড় ভাইকে জানায় ভুক্তভোগী। তখন ইফতেকারের বড় ভাই মাদ্রাসার শিক্ষকের কাছে বিষয়টি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয় আসাদ (ছদ্মনাম)।

প্রত্যক্ষদর্শী শিশু আমান (ছদ্মনাম) জানায়, ঘটনার দিনে ভোরে আসাদকে (ছদ্মনাম) খুঁজতে যায় সে। এ সময় স্টোররুমের সামনে শিশু আহাদকে (ছদ্মনাম) দেখতে পায়। পরে রুমের ভেতরে তাকিয়ে সে দেখতে পায়, ইফতেকারকে কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে ধরেছে আসাদ (ছদ্মনাম)। এরপর দেয়ালের সঙ্গে আঘাত করে ইফতেকারের পা চেপে ধরে আহাদ (ছদ্মনাম)। পরে ইফতেকারের গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা করে আসাদ (ছদ্মনাম)। এ ঘটনা সম্পর্কে কাউকে বলতে বারণ করে তাঁরা।

পুলিশ জানায়, পরে আসাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, কম্বল, ট্রাংক ও ব্যানার জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় আসামিরা ও প্রত্যক্ষদর্শী শিশু রোববার (১৯ জুন) আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।