অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার দুই আসামি। ছবি: যশোর জেলা প্রতিনিধি

যশোরে লাবলু (৪০) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

যশোরের কোতয়ালী থানা পুলিশ খোলাডাঙ্গার বেলতলা থেকে শুক্রবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ঘটনাটি ক্লুলেস হওয়ায় জেলা পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদা, বিপিএম (বার), পিপিএম-এর নির্দেশে হত্যার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশের একাধিক ইউনিট।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন সাকিল (১৬); তিনি জেলার কোতয়ালী থানার খোলাডাঙ্গা মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা। মো. ইসরাইল (৩৮); তিনিও একই থানার খোলাডাঙ্গা রেল কলোনী এলাকার বাসিন্দা।

যশোরের পুলিশ সুপারের মিডিয়া সেল থেকে দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববার (১২ জুন) এসব তথ্য জানানো হয়।

যেভাবে রহস্য উদঘাটন

পুলিশ সুপারের নির্দেশে জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ রুপন কুমার সরকার, পিপিএমের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনার পর থেকেই তদন্ত করতে থাকে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (১১ জুন) সকাল ১১টার দিকে নিহত লাভলু হোসেনের ছেলে সাকিল ও তাঁর স্ত্রী সালমাকে ডিবির একটি দল জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে।

সাকিল ঘটনা আড়ালের জন্য বিভিন্ন তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তিনি লাভলুকে হত্যার বিষয়টি গোপনের কথা স্বীকার করে জড়িতদের নাম প্রকাশ করেন। হত্যার সময় ও লাশ গুমের ঘটনাস্থলে হত্যাকারীদের সঙ্গে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করেন।

সেই সঙ্গে হত্যার কারণসহ বিস্তারিত তুলে ধরেন সাকিল। তাঁর দেয়া তথ্যে তাঁদের বাড়ির দক্ষিণে সদু পাগলের পুকুর থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি গুলি জব্দ করে ডিবি।

পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রধান আসামি কামরুজ্জামান ওরফে খোড়া কামরুলকে ধরতে অভিযান চালায় ডিবি। সাকিলের তথ্যের ভিত্তিতে খোড়া কামরুলের সহযোগী ইসরাইল নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও একটি বিদেশি পিস্তল জব্দ করে ডিবি।

পরে খোড়া কামরুলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে যে কক্ষে লাভলুকে হত্যা করা হয়েছে সেখানে পরিদর্শন করে সাকিলের তথ্য যাচাই করে সত্যতা পাওয়া যায়। নিহত লাভলুর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদেও হত্যার কারণ জানতে পারে ডিবি।

সাকিল জানান, কামরুজ্জান তার সহযোগীদের মাধ্যমে ১/২ মাস আগে স্বর্ণ চোরা কারবারিদের কাছ থেকে আনুমানিক ৬/৭ কেজি স্বর্ণ ছিনতাই করেন। কামরুলের একান্ত সহযোগী লাভলুর ছেলে সাকিল ও স্বর্ণকার কবীর হাওলাদের মাধ্যমে স্বর্ণের বার বিক্রি করে লাভলুসহ একত্রিত হয়ে প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে ভাগ করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন রাতে খোড়া কামরুল ও কবীরের ডাকে লাভলু ও তাঁর ছেলে সাকিল উপস্থিত হন। সাকিল ঘরের বাইরে মোবাইলে গেম খেলতে থাকেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী খোড়া কামরুল, কবীর ও রফিকুল লাভলুকে নিয়ে ঘরে থাকেন। রাত ১২টার দিকে সময় গুলির শব্দ হয়।

সাকিল ঘরের দিকে এগিয়ে গেলে দেখে, তার পিতা লাভলু মেঝেতে পরে আছে। বুক ও নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল।

ওই সময় খোড়া কামরুল, তার স্ত্রী, বোন, কবীর ও রফিকুল সাকিলকে সান্ত্বনা দেন লাভলুর বুকে গুলি লাগছে এবং মরে গেছে। সাকিলকে অর্থের লোভ দেখিয়ে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য খোড়া কামরুলের স্ত্রী ও বোন লাবলুর মুখে ছেঁড়া লুঙ্গি গুঁজে দেন। কামরুলের নির্দেশে কবীর ও রফিকুল মোটরসাইকেল যোগে বেলতলা আমবাগানের মধ্যে লাভলুর লাশ গুম করেন এবং সাকিলকে অস্ত্র-গুলি গোপন করতে বলেন।

অস্ত্র জব্দ হওয়ায় এসআই মফিজুল ইসলাম, পিপিএম বাদী হয়ে মামলা করেন। নিহত লাভলুর পিতা আ. মান্নান বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন।