পুলিশের হেফাজতে গ্রেপ্তার আসামিরা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

নাটোরের গুরুদাসপুরে নিখোঁজের দুই বছর পর মফিজুল ইসলাম (২৫) নামের এক যুবককে হত্যার ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এত দিন নিখোঁজ হিসেবে জানলেও গত শুক্রবার জানা গেল, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।

গতকাল রোববার উপজেলার চাঁচকৈড় এলাকার একটি মহিলা মাদ্রাসার সেপটিক ট্যাংকের পাশে পুঁতে রাখা ওই যুবকের মরদেহ উত্তোলন করা হয়।

এ সময় গুরুদাসপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদি হাসান শাকিল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এ টি এম মইনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শরিফুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (সিংড়া সার্কেল) আক্তারুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার খলিফাপাড়া মহল্লার যুবক মফিজুল ইসলাম নিখোঁজ ছিলেন। দুই বছর পর গত শুক্রবার জানা যায়, তাঁকে খুন করা হয়েছে। তাঁর মরদেহ উপজেলার চাঁচকৈড় পুরানপাড়া এলাকার একটি বালিকা মাদ্রাসার সেপটিক ট্যাংকের পাশে পুঁতে রাখা হয়।

অন্য একটি মামলায় কারাগারে আটক আল হাবিব সরকার নামের এক আসামি জাকির মুন্সি নামের তাঁর এক হাজতি বন্ধুর কাছে মফিজুলকে খুন করার গল্প বলেন। ওই হাজতি জামিনে ছাড়া পেয়ে মফিজুলকে খুন করার বিষয়টি নিহতের পরিবারকে জানালে তাঁরা থানা-পুলিশের আশ্রয় নেয়।

শুক্রবার রাতে নিহত মফিজুলের মা মাইনুর বেগম বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী আবু তাহের খলিফা, তাঁর মেয়ে তানজিলা খাতুন, স্বামী আল হাবিব সরকার ও তাঁদের আত্মীয় আশরাফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব ও পুলিশ। পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে অভিযুক্ত তানজিলা খাতুন ও তাঁর বাবা আবু তাহের খলিফাকে আটক করলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন তাঁরা।

জানা যায়, আল হাবিবের স্ত্রী তানজিলা খাতুনের সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কারণে মফিজুলকে খুন করে মরদেহ পুঁতে রাখা হয়।
তানজিলার বাবা ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল কৌশলে মফিজুলকে বাসায় ডেকে তাঁর কর্মস্থল চাঁচকৈড় বালিকা দাখিল মাদ্রাসার ভেতর নিয়ে যায়। সেখানে মফিজুল ইসলামকে হাত-পা বেঁধে ও মুখে স্কচ টেপ দিয়ে হত্যা করা হয়। পরে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর তানজিলা-হাবিব দম্পতির মধ্যে কলহ বেড়ে যায়। এ কারণে ২০২২ সালের মে মাসে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করেন তানজিলা। এ মামলায় কারাগারে আছেন আল হাবিব। কারাগারে গুরুদাসপুরের খলিফাপাড়া মহল্লার জাকির মুন্সির (৪০) সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে আল হাবিবের। আলাপচারিতায় হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আল হাবিব জানান জাকির মুন্সিকে। জাকির মুন্সি জামিনে মুক্তি পেয়ে মফিজুল ইসলামের পরিবারকে ঘটনাটি খুলে বলেন। বিষয়টি নিয়ে থানা-পুলিশের আশ্রয় নেয় পরিবারটি।

চাঁচকৈড় বালিকা দাখিল রোববার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত চলে লাশ উত্তোলনের কাজ। অবশেষে বস্তাবন্দি অবস্থায় বেরিয়ে আসে নিহতের দেহের বিভিন্ন হাড্ডিমজ্জা।