গ্রেপ্তারকৃত আসামি। ছবি : বগুড়া জেলা প্রতিনিধি

বগুড়া সদর থানায় শমসের আলী (৫২) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে জেলার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়া আসামির নাম মো. মোস্তফা (৪০); তিনি নীলফামারী জেলার ডিমলা জেলার বাসিন্দা।

তাঁকে গত সোমবার (২৯ নভেম্বর) ডিমলা থানার ডালিয়া-২ নামক বাজার থেকে রাত ৮টা ২০ মিনিটে গ্রেপ্তার করা হয়।

বগুড়া জেলার পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. আকরামুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

পিবিআই জানিয়েছে, মৃত শমসের আলী ও গ্রেপ্তারকৃত আসামি মোস্তফা দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে বগুড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে দিন মজুরির কাজ করছিলেন। তাঁরা বগুড়ায় এসে মাটিডালী ঠান্ডুর স মিলে রাতে ঘুমাতেন এবং দিনের বেলায় মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন। পাশেই শমসেরের ছোট ভাই সিরাজুল ইসলাম মাটিডালী গ্রামের হাইস্কুলের পেছনে বাসা ভাড়া নিয়ে বাস করেন। তিনি পেশায় রিকশাচালক।

গত ২৮ জুন সকাল ৯টার দিকে নিহত ব্যক্তি ও গ্রেপ্তার আসামি দিনমজুরি কাজের উদ্দেশ্যে শাখারিয়া কবিরাজপাড়া নামক গ্রামে রওনা দেন। এরপর থেকে ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত ফোনটি তাঁর আত্মীয়স্বজন বন্ধ পান। পরের দিন ২৯ জুন সন্ধ্যা ৬টায় বগুড়া সদর থানাধীন হোটেল মম ইন পার্কের পেছনে করতোয়া নদীর পূর্ব পাশে জলিলের ইউক্যালিপটাস বাগানের পশ্চিম পাশে করতোয়া নদীর ধারে শমসের আলীর মৃতদেহ পাওয়া যায়।

উক্ত ঘটনায় তাঁর ছোট ভাই সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। বগুড়া সদর থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করাকালীন পিবিআই, বগুড়া জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে কার্যক্রম শুরু করে।

পিবিআইয়ের জেলার পুলিশ সুপারের নির্দেশে এসআই মো. জাকারিয়া মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে কার্যক্রম শুরু করেন।

পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম-এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও পিবিআই বগুড়া জেলার পুলিশ সুপার মো. আকরামুল হোসেনের দিকনির্দেশনায় মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই মো. জাকারিয়া সঙ্গীয় ফোর্সসহ তথ্যপ্রযুক্তি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামি মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করেন।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঘটনার দিন ২৮ জুন সকালে আসামি মোস্তফা ৩০০ টাকা হাজিরা এবং শমসের ৪০০ টাকা হাজিরা হিসাবে বগুড়া সদর থানাধীন শাখারিয়া কবিরাজপাড়া গ্রামে দুজন আলাদা বাড়িতে কাজ করতে যান। কাজ শেষে ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি মাটিডালী ঠান্ডুর স মিলের উদ্দেশে রওনা হলে ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মম ইন পার্কের পেছনে করতোয়া নদীর পূর্ব পাশের পাড়ে ইউক্যালিপটাস বাগানের পশ্চিম পাশে ভুক্তভোগী শমসেরের সঙ্গে দেখা হয়। তখন দুজন মজা করে কথা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে আসামি মোস্তফা উত্তেজিত হয়ে শমসেরের লিঙ্গে ডান পা দিয়ে জোরে লাথি মারেন। এরপর শমসের মাটিতে পড়ে যান।

তখন আসামি মোস্তফা শমসেরকে ডাকাডাকি করলে তিনি কোনো সাড়া দেননি। তখন তিনি শমসেরের নাকের কাছে হাত দিয়ে দেখেন, তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস নেই।

এরপর আসামি শমসেরের লিঙ্গে হাত দিয়ে দেখেন, লিঙ্গের অণ্ডকোষ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে গেছে। তখন আসামি মোস্তফা পুরাতন নাইলনের চিকন রশি দিয়ে নিহত ব্যক্তির দুই হাত পেছনের দিকে বাঁধেন। পরে আসামি ৩০/৪০ মিনিট ঘটনাস্থলে অবস্থান করে ধূমপান করে ঠান্ডুর স মিলে এসে শুয়ে পড়েন।

পরের দিন (২৯ জুন) বিকেল ৫টায় আসামি মোস্তফাসহ শমসেরের ছোট ভাই সিরাজুল খোঁজাখুঁজি করেন। ওই দিনই সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে এলাকার লোকজন লাশ দেখে পুলিশকে সংবাদ দিলে, সিরাজুল ও আসামি মোস্তফা লাশের কাছে গিয়ে শনাক্ত করেন। ঘটনার তিন দিন পরে আসামি মোস্তফা বগুড়া থেকে নিজ বাড়িতে গিয়ে শমসেরের দাফনে অংশ নেন।

পিবিআই জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে আদালতে পাঠানো হলে তিনি দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।