ডাকাতি মামলার রহস্য উদঘাটন ও আটজনকে গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। ছবি: ঢাকা জেলা পুলিশ

কয়েক দিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ আন্তজেলা ডাকাত চক্র র‌্যাব পরিচয়ে ঢাকা-নবাবগঞ্জ সড়ক এবং ঢাকা-মাওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বাস থামিয়ে বিভিন্ন পরিবহনে যাতায়াতকারী ব্যবসায়ীদের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে ডাকাতি করে আসছিল। ডাকাতেরা মূলত ঢাকার পাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার তাঁতীবাজারে আসা স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের টার্গেট করত। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের স্বর্ণ ও টাকা ডাকাতি করার জন্য সংঘবদ্ধ এই ডাকাত চক্র তাঁতীবাজারকেন্দ্রিক এক বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে।

গত ৩১ জানুয়ারি দুপুরে দোহারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী নাহিদ ও খোকন স্বর্ণ বিক্রি করার জন্য ঢাকার তাঁতীবাজারে যান। স্বর্ণ বিক্রি শেষে নাহিদ ৪০ লাখ টাকা ও খোকন ৩১ লাখ টাকা সঙ্গে নিয়ে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দোহারের উদ্দেশে নবকলি বাসে ওঠেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তাঁদের বহনকারী বাসটি ঢাকা-নবাবগঞ্জ রোডের কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন কোনাখোলা এলাকায় পৌঁছালে একটি সাদা মাইক্রোবাস নবকলি বাসটি থামায়। তারপর মাইক্রোবাস থেকে কয়েকজন ডাকাত (র‌্যাবের কটি পরিহিত) বাসে উঠে যাত্রীদের র‌্যাবের লোক পরিচয় দিয়ে দুজন আসামিকে ধরতে আসছে বলে জানায়। তারপর ডাকাত সদস্যরা বাসে থাকা স্বর্ণ ব্যবসায়ী নাহিদ ও খোকনকে টাকার ব্যাগসহ বাস থেকে নামিয়ে ডাকাতদের মাইক্রোবাসে তোলে। এরপর ডাকাত দল নাহিদ ও খোকনের চোখ-মুখ বেঁধে মারধর করে এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে তাঁদের সঙ্গে থাকা ৭১ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে দুই স্বর্ণকারকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের নিমতলা এলাকায় হাইওয়ের পাশে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।

গ্রেপ্তার হওয়া আটজন। ছবি: ঢাকা জেলা পুলিশ

এই ডাকাতির ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ডাকাতদের আসামি করে একটি ডাকাতির মামলা হয়।

মামলার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান পিপিএম (বার) র‌্যাবের পরিচয় ব্যবহার করে ডাকাতি করা সংঘবদ্ধ এই ডাকাত চক্রকে দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ক্রাইম এন্ড অপস্ (দক্ষিণ) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে একটি চৌকস তদন্ত দল দুর্ধর্ষ এই ডাকাতি মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য ব্যাপক কার্ষক্রম শুরু করে। তদন্ত দল ঘটনাস্থলের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা এবং প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ এই ডাকাত চক্রকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

পরে মো. শাহাবুদ্দিন কবীর বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরানীগঞ্জ সার্কেল এবং মামুন-অর রশিদ পিপিএম, অফিসার ইনচার্জ, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস আভিযানিক দল কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এবং ডিএমপির বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত আন্তজেলা ডাকাত চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা হলেন সুজন (৩৯), আলামিন, ড্রাইভার কবির (৪৬), মিল্টন (৪৩), জাবেদ (৪০), নয়ন (২৮), কামাল (৪৫) ও আবদুর রহমান (৪৫)।

ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং ডাকাতি করা টাকা জব্দ করা হয়। ছবি: ঢাকা জেলা পুলিশ।

অভিযানকালে আলামিনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ডাকাত সুজন মন্ডলের হেফাজত থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বিদেশি রিভলবার এবং দুটি তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাঁদের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত, হাইএস মাইক্রোবাস ও লুন্ঠিত টাকা জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন ঢাকা-নবাবগঞ্জ রোডে একইভাবে আরও ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা আছে।