চাকরি পাওয়ার উল্লাসে মাতেন কুমিল্লার প্রার্থীরা। আজ মঙ্গলবার জেলা পুলিশ লাইনসের আরআই আবদুল হালিম মিলনায়তনে। ছবি: দৈনিক বাংলা

কুমিল্লায় এবার কেবল পরীক্ষার ফি মাত্র ১১৮ টাকা খরচে ২৫ নারীসহ ২০৬ জন পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা পুলিশ লাইনসের আরআই আবদুল হালিম মিলনায়তনে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ সময় চূড়ান্তভাবে মনোনীত প্রার্থীরা উল্লাসে মেতে ওঠেন। খবর দৈনিক বাংলার।

প্রকাশিত ফলাফলে নাম এসেছে দেবিদ্বার উপজেলার আল-আমিনের। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে খুশিতে কেঁদেই ফেলেন এই যুবক। তিনি বলেন, ‘আমরা পাঁচ ভাই-বোন। কৃষক বাবার আয় দিয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি কোনোরকমে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করেছি। আজ আমি ঘুষ ছাড়া পুলিশে চাকরি পেয়েছি। খবরটি শুনে বাবা কাঁদলেন।’

চাকরি পেয়েছেন মুরাদনগর উপজেলার মো. শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা মরদেহ বহনের কাজ করেন, যেখানে নির্দিষ্ট বেতন নেই। এই কাজ করে আমাদের ছয় ভাই-বোনকে লেখাপড়া করিয়েছেন। এখন থেকে আমি সংসারের হাল ধরব।’

চাকরি পাওয়ার খবর পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি শরিফ। তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের পরিবারে ঈদের আনন্দ বইছে।’

অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে বড় হয়েছেন লাকসামের সুস্মিতা সিংহ। পুলিশের চাকরি করে বাবা-মাকে সুখে রাখতে চান তিনি। বলেন, ‘আমার বাবা দর্জি। এখন পুরোপুরি চোখে দেখেন না। তাই আয়-উপার্জন নেই। আমি এখন চাকরি করে সাধ্যের মধ্যে বাবা-মায়ের সব চাওয়া পূরণ করতে চাই।’

আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে কথাই বলতে পারছিলেন না মারিয়া রহমান। বুড়িচং উপজেলার কিং বাজেহুড়া গ্রামের কৃষক মাহবুবুর রহমানের মেয়ে মারিয়া চাকরি করে পরিবারের হাল ধরতে চান।

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আবদুল মান্নান বলেন, এবার মোট ৫ হাজার ৮২২ জন আবেদনকারীর মধ্যে উপস্থিত ছিল ৪ হাজার ১৮৭ জন। ফিটনেসসহ অন্যান্য পরীক্ষা শেষে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ হাজার ৪০৯ জন, যেখানে কৃতকার্য হয় ৫১৭ জন। তাঁদের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষায় ২০৬ জনকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হয়। এর মধ্যে ১৮১ জন পুরুষ এবং ২৫ জন নারী।

এসপি আবদুল মান্নান জানান, মাত্র ১১৮ টাকা খরচ করে প্রার্থীরা চাকরি পেয়েছেন। দীর্ঘ যাচাই-বাছাই শেষে শতভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো লবিং-তদবির কাজে আসেনি।

ফলাফল ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) খন্দকার আশফাকুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মতিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ কামরান হোসেন, গোয়েন্দা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজেস বড়ুয়াসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।