প্রতীকী ছবি

রাজধানীর গুলশানের কূটনৈতিক এলাকায় বিদেশি নাগরিকের ওপর নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের এক সদস্যের হামলাচেষ্টা নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে। দেলোয়ার নামে ওই জঙ্গি সদস্যের টার্গেট ছিল মার্কিন নাগরিকের ওপর হামলা করা। তবে তাঁকে হামলাচেষ্টার সময় ধরে ফেলেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
খবর জাগোনিউজ২৪ডটকমের।

বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর পৌনে একটার দিকে গুলশানের কূটনৈতিক এলাকা থেকে দেলোয়ারকে গ্রেপ্তারের পর গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা (যার নম্বর ২০) করা হয়। মামলার বাদী হয়েছেন সিটিটিসির উপপরিদর্শক (এসআই) আমির হোসেন। শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আদালতের মাধ্যমে তাঁকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিটিটিসি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

দেলোয়ারের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানাধীন জার্মিত্তা এলাকায়। তাঁর বাবার নাম শাহাজুদ্দিন। জিজ্ঞাসাবাদে দেলোয়ার জানান, তিনি দীর্ঘদিন জাপানে ছিলেন। প্রায় এক বছর আগে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং মানিকগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। তিনি আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য। অনলাইনে বিভিন্ন অডিও-ভিডিও দেখে তিনি জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন।

পরে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে তিনি একজন বিদেশি নাগরিকের ওপর হামলার জন্য বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে গুলশানের কূটনৈতিক এলাকায় যান। থাইল্যান্ড দূতাবাস-সংলগ্ন সড়কে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) মাইক্রোবাসের ভেতরে থাকা লোকদের আমেরিকান ভেবে তিনি পেট্রল বোমা ছোড়েন। গাড়িতে তখন এআইইউবির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ নজরুল ইসলাম ও জুনিয়র এক্সিকিউটিভ নাজমুল হাসান ছিলেন। সামান্য আহত হলেও তৎক্ষণাৎ তাঁরা স্থানীয় পথচারীদের সহায়তায় সেই জঙ্গিকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন।

খবর পেয়ে গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে সিটিটিসির একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেলোয়ারকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। তাঁর ব্যাগ তল্লাশি করে দেড় লিটার তরল পদার্থ (পেট্রল জাতীয়), দুটি লোহার তৈরি ছুরি ও জাপানি নাগরিকত্বের একটি কার্ড পাওয়া যায়। এরপর দেলোয়ারকে নিয়ে তাঁর গ্রামের বাড়িতেও অভিযান চালায় পুলিশ। তাঁর বাসা থেকে একাধিক ইলেকট্রনিকস যন্ত্র ও কিছু নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে।

এসআই নুরুজ্জামান বলেন, ‘গাড়িতে পেট্রলসহ একটি বোতল ছুড়ে মেরেছিলেন দেলোয়ার। পরে গাড়িতে থাকা লোকজনই তাঁকে আটক করে। খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই। পুরো বিষয়টি এখন কাউন্টার টেররিজম ইউনিট দেখছে।’

এদিকে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-স্টাফদের ওপর বড় পরিসরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক প্রাণহানির মাধ্যমে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেন দেলোয়ার।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, দেলোয়ার এলোমেলো তথ্য দিচ্ছেন। তাঁর মানসিক সমস্যা রয়েছে বলেও মনে হয়েছে। তবে তিনি গ্রেফতারের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি এড়াতে এসব অভিনয় করছেন কি না, তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ কারণে সতর্কতার সঙ্গে দেলোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁর সহযোগীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।