পুলিশের হেফাজতে গ্রেপ্তার দম্পতি। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

কুড়িগ্রামের উলিপুর থানার পুলিশ চাঞ্চল্যকর শিশু চম্পা হত্যার মূল আসামি এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে। এই দম্পতি ১১ বছর ধরে পলাতক ছিলেন।

২০১৩ সালে উলিপুর থানার দলদলিয়া ইউনিয়নের গণকপাড়া গ্রামের মো. চাঁদ মিয়া ওরফে ভগলুর ৭ বছরের শিশু চম্পাকে হত্যা করেন মিন্টু বসুনিয়া ও তাঁর স্ত্রী মোর্শেদা বেগম দম্পতি।

১১ বছর পলাতক থাকার পর গাজীপুর থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে উলিপুর থানা-পুলিশের একটি চৌকস টিম।

২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে উলিপুর থানাধীন দলদলিয়া ইউনিয়নের গণকপাড়া গ্রামের জনৈক আশরাফ ডাক্তারের পুকুরে গ্রেপ্তার আসামি মিন্টু বসুনিয়া, মামলার বাদী মো. চাঁদ মিয়া ওরফে ভগলু (আসামি মিন্টুর আপন বড় ভাই) অন্য সঙ্গী-সাথীসহ মাটি কাটতে গিয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই এলাকার বজরুলের সাথে বাদী ও আসামি মিন্টু মিয়ার কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে মিন্টু বসুনিয়া ও তাঁর বড় ভাই অর্থাৎ এ মামলার বাদীসহ প্রতিপক্ষ বজরুলকে ভাড়ের বাংখুয়া দিয়ে মারপিট করে। মারপিটের ফলে বজরুল গুরুত্ব অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে মুমূর্ষু অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এতে গুজব সৃষ্টি হয় যে বজরুল মারা গেছেন। এ ঘটনার দায় থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য এবং প্রতিপক্ষকে পাল্টা মামলায় ঘায়েল/ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে গ্রেফতারকৃত মিন্টু বসুনিয়া ও তাঁর স্ত্রী মোর্শেদা বেগম পরস্পর যোগসাজশে অত্যন্ত সুকৌশলে আসামি মিন্টু বসুনিয়া তাঁর আপন ভাতিজি অর্থাৎ বাদীর ৭ বছরের শিশুকন্যা চম্পাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে বাড়ির পার্শ্ববর্তী বাঁশঝাড়ে লাশ ফেলে রেখে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। একপর্যায়ে মিন্টু মিয়া বাঁশঝাড় থেকে চম্পার লাশ শনাক্ত করেন। মামলা হয় প্রতিপক্ষ বজরুল পরিবার গংয়ের বিরুদ্ধে। ধৃত আসামিসহ বাদীর লোকজন প্রতিপক্ষ বজরুলের ভাতিজা হাফিজুলকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উলিপুর থানার তৎকালীন ইন্সপেক্টর তদন্ত মো. জাকির উল ইসলাম চৌধুরী মামলাটি সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ আইনানুগ তদন্তকালীন ঘটনার ভিন্ন রূপ মোড় নেয়। তদন্তের একপর্যায়ে বাদীর আপন ভাই গ্রেপ্তার আসামি মিন্টু বসুনিয়াকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মিন্টু বসুনিয়া প্রতিপক্ষকে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য নিজ স্ত্রীর সহযোগিতায় তাঁর আপন ভাতিজি চম্পাকে হত্যা করার ঘটনার বিষয়ে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ পান।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মিন্টু বসুনিয়াকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। তদন্তকারী অফিসার বজরুল পরিবার গংকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে মিন্টু বসুনিয়া ও তাঁর স্ত্রী মোর্শেদা বেগমের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করেন। মিন্টু বসুনিয়া উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে মোর্শেদা বেগমসহ দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর ধরে আত্মগোপনে থাকেন।

পরে অফিসার ইনচার্জ, উলিপুর থানাসহ একটি চৌকস টিম বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানামূলে দীর্ঘদিনের চেষ্টায় গাজীপুর র‍্যাব-৩ এর সহযোগিতায় উলিপুর থানা-পুলিশের চৌকস টিম আসামিদেরকে গাজীপুর জেলার বড়বাড়ি জয় বাংলা তিনরাস্তার মোড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আজ উলিপুর থানায় নিয়ে আসে।

কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রুহুল আমীন বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। আসামি প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেছে। অপরাধী যতই চতুরতা অবলম্বন করুক না কেন, একদিন না একদিন তাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে।