মেধাবী শিক্ষার্থী মো. মোস্তাকিম আলীকে আরএমপির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ছবি : আরএমপি

কাঠমিস্ত্রির কাজের ফাঁকে পড়াশোনা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা ২০২০-২১ সেশনে ‘বি’ ইউনিটে প্রথম হওয়া মেধাবী শিক্ষার্থী মো. মোস্তাকিম আলীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সদর দপ্তরে পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক এই সংবর্ধনা দেন।

আরএমপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে আরএমপির কমিশনার মোস্তাকিমকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। সেই সঙ্গে শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশনার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘স্বপ্নের সোনার বাংলা’ গড়ার প্রত্যয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন। সেই লক্ষ্য অর্জনে মোস্তাকিমের মতো তরুণ মেধাবীদের এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মেধাবীদের মেধা বিকাশে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। তবেই বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে।

মোস্তাকিম পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে সংবর্ধনা পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, ‘পুলিশ কমিশনার মহোদয় আমার মতো ছেলেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এনে সংবর্ধনা দিয়ে সম্মানিত করেছেন। এই সংবর্ধনা আমাকে ভবিষ্যতে দেশের জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগাবে।’ ভবিষ্যতে তাঁর পাশে থাকার কথা ব্যক্ত করায় পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।

প্রসঙ্গত, ‘বেকার জীবন’ নামে একটি ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ‘কাঠমিস্ত্রির কাজের ফাঁকে পড়াশোনা করে ভর্তি পরীক্ষায় ১ম মোস্তাকিম’ সংবাদটি আরএমপির পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের নজরে আসে। এরপর তিনি মোস্তাকিমের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিতে পবা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সিরাজুম মনিরকে নির্দেশ দেন।

ওসি মনির মো. মোস্তাকিমের বিষয়ে খোঁজ নিতে শুরু করেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মো. মোস্তাকিম আলী রাজশাহীর তানোর থানার বাঁধাইড় মিশনপাড়া এলাকার মো. শামায়ুন আলীর ছেলে। সে দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় এবং খুবই পরিশ্রমী ও মেধাবী। তাঁর বাবা পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি।

মোস্তাকিম প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেই বাবার পেশায় যুক্ত হন। দিনে কাঠমিস্ত্রির কাজ করলেও রাতে পড়াশোনা করতেন।

তানোর মুন্ডুমালা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে জিপিএ ৪ দশমিক ৫৫ নিয়ে মাধ্যমিক এবং ফজর আলী মোল্লা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে জিপিএ-৪ দশমিক ৮৩ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদিনা ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজে ইংরেজি বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আকাঙ্ক্ষা থেকে এইচএসসিতে পুনরায় মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রস্তুতির জন্য ভর্তি পরীক্ষার ১৫ দিন আগে কাঠমিস্ত্রির কাজ থেকে ছুটি নেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক প্রথম বর্ষ ২০২০-২১ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ‘বি’ ইউনিটের গ্রুপ-৩ এ ৮০ দশমিক ৩০ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) মো. সুজায়েত ইসলাম, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) মো. রশীদুল হাসান পিপিএম, বিশেষ পুলিশ সুপার এ এফ এম আনজুমান কালাম, বিপিএম-বারসহ আরএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।