রাজধানীর সবুজবাগে তানিয়া হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন। ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোট ডটকম

দুই তরুণ এসি সার্ভিসিংয়ের কাজ করছিলেন। গৃহকর্ত্রী তানিয়া আফরোজ তখন রান্নায় ব্যস্ত। হঠাৎ শোবার ঘরে ঢুকে দেখেন, ওই দুই তরুণ আলমারি খুলে সব তছনছ করছে। তখন চিৎকার দিলে বালিশ চাপা আর চাপাতির কোপে সেখানেই তানিয়াকে প্রাণ হারাতে হয়।
ঢাকার সবুজবাগে এই হত্যাকাণ্ডে তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর আজ মঙ্গলবার পল্টন থানায় সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মো. আ. আহাদ। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
এই হত্যাকাণ্ডের পর বাপ্পী নামে এসি টেকনিশিয়ানকে সন্দেহ করা হচ্ছিল। ২৬ বছর বয়সী এই যুবকের পাশাপাশি সুমন হোসেন হৃদয় (২২) ও রুবেল (৪২) নামে আরও দুজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা আহাদ জানান, এসি টেকনিশিয়ান বাপ্পীকে সোমবার ঝালকাঠির নলছিটির গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ঢাকার রামপুরা এলাকা থেকে হৃদয় ও রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উপ কমিশনার আহাদ বলেন, শনিবার বিকালে বাপ্পী ও হৃদয় ওই বাসায় এসি সার্ভিসিং করতে যান। পরে রুবেলও ওই বাসায় যান। তানিয়া তখন ১০ মাসের ছেলেটিকে নিয়ে রান্নাঘরে রান্না করছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা আহাদ বলেন, ‘এর মধ্যে তানিয়া হঠাৎ বেডরুমে গিয়ে দেখেন, বাপ্পী এবং হৃদয় তার আলমারি খুলে সব বের করে, কিছু একটা খুঁজছে। ঘটনা দেখে তানিয়া চিৎকার করে ওঠেন। সঙ্গে সঙ্গে হৃদয় তাকে বালিশ চাপা দিয়ে ফেলে দেয়। তারপরে বাপ্পী ব্যাগ থেকে চাপাতি বের করে তাকে কোপায়। তানিয়া বিছানায় পড়ে যান।’

গত শনিবার সন্ধ্যায় সবুজবাগ থানা এলাকার বেগুনবাড়ি মাস্টার গলির চারতলা ভবনের দোতলার ফ্ল্যাটে তানিয়া খুন হন। লাশ উদ্ধারের সময় নিহতের তিন বছর বয়সী মেয়ে এবং ১০ মাসের ছেলেকে রক্তমাখা অবস্থায় পাওয়া যায় সেখানে। তানিয়ার স্বামী মাইনুল ইসলাম ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরির কারণে সেখানে অবস্থান করছিলেন।
উপকমিশনার আহাদ বলেন, ‌’বাচ্চারা কান্নাকাটি শুরু করলে ব্যাগে থাকা স্কচটেপ বের করে তাদের মুখে পেঁচিয়ে দেয়, স্কচটেপ দিয়ে হাতও বেঁধে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে তিন বছরের মায়মুনা বেশি কান্নাকাটি করলে তাকেও হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। বাপ্পী তিন বছরের মেয়েটিকেও কোপাতে চায়। তখন হৃদয় তাকে আটকায়। এরপর হাত ও মুখ বাঁধা অবস্থায় শিশুটিকে বাথরুমে ঢুকিয়ে রাখে তারা।’

লাশ উদ্ধারের বর্ণনা দিতে গিয়ে উপ কমিশনার আহাদ জানান, খুনিরা যখন লুটপাট ও হত্যাকাণ্ড শেষ করে চলে যায়, তখনও বাসার চুলা জ্বলছিল। সেসময় তিন বছরের শিশুটি বাথরুমের দরজা খোলা পেয়ে বেরিয়ে আসে। হাত-মুখ বাঁধা অবস্থায় পাশের বাসায় গিয়ে কনুই দিয়ে সে দরজায় ‘নক করে’। ওই বাসার নারী দরজা খুলে জিজ্ঞেস করেন, ‌’কী হয়েছে?’, জবাবে শিশুটি বলে, ‘মারছে মারছে, মাকে মারছে।’

তারপরে ওই নারী জিজ্ঞেস করেন কে মারছে? শিশুটি বলে, ‘লোক লোক’।
এরপর পাশের বাসার নারী বাসায় ঢুকে আগে চুলা নেভান। পরে পুলিশকে খবর দেন।

সংবাদ সম্মেলনে সবুজবাগ ওসি মোরাদুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।