সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এজেন্টের আড়ালে অবৈধ হুন্ডি কারবারের অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার ক্রাইম ইউনিট। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ১১টি মোবাইল ফোন, ১৮টি সিম কার্ড, একটি ল্যাপটপ ও একটি ট্যাব জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া জানান, গত সোমবার (২১ নভেম্বর) ও মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) কুমিল্লা ও ঢাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আসামিরা হলেন ফেনী সদর থানা এলাকার মীর মো. কামরুল হাসান শিশির (ফ্রিডম নেট ওয়েবসাইট পরিচালনাকারী), কুমিল্লার লাকসাম থানা এলাকার খোরশেদ আলম (ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ ম্যানেজার), মো. ইব্রাহিম খলিল (বিকাশ এজেন্ট) ও কাজী শাহ নেওয়াজ (বিকাশ ডিএসও) এবং কুমিল্লার কোতোয়ালি থানা এলাকার মো. আজিজুল হক তালুকদার (বিকাশ এজেন্ট) ও মো. নিজাম উদ্দিন (বিকাশ এজেন্ট সহযোগী)।

সিআইডি জানায়, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে হুন্ডির কারবার হচ্ছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে নজরদারি শুরু করে সিআইডি। এ সময় পাঁচ হাজারের বেশি এমএফএস এজেন্ট অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া যায়। সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিট এর আগে চট্টগ্রামে যৌথ অভিযান চালিয়ে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার ও মঙ্গলবার কুমিল্লা ও ঢাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া জানান, গ্রেপ্তার আসামিরা হুন্ডির কারবারের সঙ্গে জড়িত। অবৈধভাবে হুন্ডির মাধমে বিদেশে অর্থপাচার এবং প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে অর্থ পাচার করে আসছেন তাঁরা। এজন্য তাঁরা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করে থাকেন। প্রথম দলটি বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করেন। এরপর দেশ থেকে যাঁরা টাকা পাচার করতে চান তাঁদেরকে দেন। দ্বিতীয় দলে থাকা পাচারকারী ও সহযোগীরা দেশীয় মুদ্রায় সেই অর্থ এমএফএস এজেন্টকে পরিশোধ করেন। তৃতীয় দলে থাকা এমএফএস এজেন্ট বিদেশে অবস্থানকারীর কাছ থেকে এমএফএস নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করেন। তাঁরা গত এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত আনুমানিক ৬ কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি জানান, কুমিল্লার লাকসামে আসামি মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের (৪২) মালিকানাধীন বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ জে এ এন্টারপ্রাইজের দুই হাজার এজেন্ট সিমের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়।সিআইডি সন্দেহজনক দুটি এজেন্ট সিম নিয়ে কাজ করে, যার মাধ্যমে গত ৬ মাসে আনুমানিক ৩ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য মেলে। এই দুইটি সিম নিয়ে কাজ করতে যেয়ে এমন আরও ১১টি এজেন্ট সিমের সন্ধান পায় সিআইডি।

পুলিশি হেফাজতে গ্রেপ্তার আসামিরা। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ডিজিটাল হুন্ডির কাজকে সহজ, নির্ভুল এবং দ্রুততম উপায়ে সম্পন্ন করতে তাঁরা বেশ কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকেন। ফ্রিডমফ্লেক্সি২৪ডটকম নামের একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে সৌদি প্রবাসী হুন্ডি কারবারিরা বাংলাদেশি নম্বরগুলো ইনপুট দেন। এরপর বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন এমএফএস এজেন্টদের সহায়তায় হুন্ডির এজেন্টদের মাধ্যমে টাকাগুলো সরাসরি প্রাপকের কাছে চলে যায়। এমএফএস এজেন্টদের সহযোগিতায় চক্রের সদস্যরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, ভিডিও স্ট্রিমিং, ভার্চুয়াল মুদ্রা ও মাদক কেনা-বেচা, স্বর্ণ চোরাচালান ও ইয়াবা কারবারসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।

আসামিদের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।