মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) আড়ালে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের কয়েকজন। ছবি: সিআইডি

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) আড়ালে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিট ঢাকা এবং চট্টগ্রামে যৌথভাবে তিনটি অভিযান পরিচালনা করে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এই হুন্ডি চক্রের সদস্যরা গত চার মাসে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাচার করেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হুন্ডি এজেন্ট আক্তার হোসেন (৪০ ), দিদারুল আলম সুমন (৩৪), হুন্ডি এজেন্টের সহযোগী খোরশেদ আলম ইমন (২২), বিকাশ এজেন্ট রুমন কান্তি দাস জয় (৩৪), সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের সিইও রাশেদ মঞ্জুর ফিরোজ (৪৫), বিকাশ ডিএসএস মো. হোসাইনুল কবির (৩৫), নবীন উল্লাহ (৩৭), মো. জুনাইদুল হক (৩০), আদিবুর রহমান (২৫), বিকাশ ডিএসও আসিফ নেওয়াজ (২৭), ফরহাদ হোসাইন (২৫), বিকাশ এজেন্ট আবদুল বাছির (২৭), মাহাবুবুর রহমান সেলিম (৫০), আবদুল আউয়াল সোহাগ (৩৬), ফজলে রাব্বি (২৭), এবং হুন্ডি পরিচালনাকারী শামীমা আক্তার (৩২)।

তাঁদের কাছ থেকে ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮০ টাকা, চারটি সিমে জব্দকৃত ইলেক্ট্রনিক মানি ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৪৭ হাজার ২২৯ টাকা, চারটি মোবাইল ফোন তিনটি ল্যাপটপ একটি ট্যাব ৩৩ টি সিম এবং একটি হার্ডডিস্ক, সাতটি মডেম এবং ১০টি চেক বই জব্দ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানা, ঢাকার মোহাম্মদপুর এবং খিলগাঁও মডেল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) আড়ালে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সিআইডি। ছবি: সিআইডি

সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বিশ্ব পরিস্থিতি এ দেশের অর্থনীতির ওপর যে চাপ তৈরি করেছে, তা মোকাবেলা করার জন্য সরকার অত্যন্ত তৎপর। হুন্ডি সব সময় রিজার্ভের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর এই ঝুঁকি মোকাবেলায় সিআইডি হুন্ডি কার্যক্রমের ওপর নজরদারি শুরু করে। সিআইডি ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহপূর্বক এমএফএসের মাধ্যমে হুন্ডি পরিলক্ষিত হচ্ছে এ রকম প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক এমএফএস এজেন্ট একাউন্টের সন্ধান পায়। সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিট ঢাকা এবং চট্টগ্রামে যৌথভাবে তিনটি অভিযান পরিচালনা করে ওই ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে।

অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা যায় যে একটি সংঘবদ্ধ চক্র অবৈধভাবে হুন্ডির মাধমে বিদেশে অর্থ পাচার এবং বিদেশে অবস্থানরত ওয়েজ আর্নারদের কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে মানি লন্ডারিং অপরাধ করে আসছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায় এর এমএফএস এজেন্ট এই অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার সাথে জড়িত মর্মে চিহ্নিত করা হয়। এই ৫০০০ পাঁচ হাজার এমএফএস এজেন্টের হুন্ডি ব্যবসার কারণে গত চার মাসে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমান মূ্ল্যের রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যা গত এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। যা ইউএস ডলারে পরিমাণ দাড়ায় প্রায় ৭.৮ বিলিয়ন।

সংঘবদ্ধ হুন্ডিচক্র প্রবাসে বাংলাদেশিদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশে না পাঠিয়ে উক্ত বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমাণ মূল্যে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করে। এ কাজে অপরাধীরা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজটি করে থাকে। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মূদ্রা সংগ্রহ করে, দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করে তাদের দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপ পাচারকারী ও তার সহযোগীরা দেশীয় মুদ্রায় উক্ত অর্থ এমএফএসের এজেন্টকে প্রদান করে। তৃতীয় গ্রুপ তথা এমএফএসের এজেন্ট কর্তৃক বিদেশে অবস্থানকারীর নিকট হতে প্রাপ্ত এমএফএস নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে।

এসব চক্র প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে এমএফএস ব্যবহার করে ক্যাশ ইন এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে। এমএফএসের এজেন্টদের সহযোগিতায় পাচারকারীরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।