করোনাভাইরাসের টিকা উদ্ভাবনের পর তা কিনতে হুড়োহুড়ি লাগিয়েছিল ধনী দেশগুলো। কানাডাসহ কোনো কোনো দেশ তো মোট জনসংখ্যার কয়েক গুণ টিকার ডোজ কিনে রেখেছিল। এবার করোনার সম্ভাব্য একটি ওষুধ নিয়েও একই ধরনের হুড়োহুড়ি শুরু করেছে কয়েকটি দেশ। যদিও ওষুধটি এখনো কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পায়নি। খবর সিএনএনের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধটি বড় ধরনের অস্ত্র হতে পারে। তবে তাঁদের আশঙ্কা, কিছু মানুষ টিকার বিকল্প হিসেবে ওষুধটির ব্যবহার করতে পারে। অথচ করোনার বিরুদ্ধে টিকাই এখন পর্যন্ত সেরা প্রতিরোধ।

মলনুপিরাভির নামের ওষুধটি উদ্ভাবন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মার্ক। ওষুধটির জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছে মার্ক। অনুমোদন পেলে মলনুপিরাভির হবে করোনার প্রথম ওষুধ।

তবে বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান এয়ারফিনিটির তথ্যমতে, ওষুধটি কিনতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্তত আটটি দেশ এরই মধ্যে হয় চুক্তি করেছে, নতুবা আলোচনা করছে। এই দেশগুলোর মধ্যে নিউজিল্যান্ড,, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়াও রয়েছে। মজার বিষয় হলো, এই দেশগুলো টিকা কেনার ক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো নীতি’ নিয়েছিল। কিন্তু এবার আর তারা ধীরে চলতে রাজি নয়।

অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ড্রাগস ফর নেগলেক্টেড ডিজিজেস ইনিশিয়েটিভের উত্তর আমেরিকা বিষয়ক নির্বাহী পরিচালক র‍্যাচেল কোহেন বলেন, মলনুপিরাভির আসলেই আশা জাগাচ্ছে। তবে তিনি টিকা কেনার হুড়োহুড়ির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ইতিহাসের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। করোনার টিকার ক্ষেত্রে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল কিংবা যে ভুল হয়েছিল, সেই একই অবস্থা, একই ভুল যেন এবারও না হয়।’

মলনুপিরাভির নিয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশা তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, করোনার সংক্রমণে এই ওষুধ সেবন করলে সিংহভাগ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগীর করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই ওষুধটি শুরু করা যাবে। মলনুপিরাভিরের ২০০ মিলিগ্রামের চারটি ক্যাপসুল দিনে দুবারে খেতে হবে। এভাবে ওষুধটি পাঁচ দিন খেতে হবে। অর্থাৎ মোট ৪০টি পিল খেতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মেডিকেল স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় সেনানায়েকে বলেন, করোনার টিকায় যেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, ওষুধটিতে তেমন কিছু হবে না। মলনুপিরাভির শরীরে ভাইরাসের বংশবিস্তার বন্ধে কাজ করে। আরেক কথায় বলা যায়, এটি ভাইরাসকে দুর্বল করে দেয় এবং ভাইরাসের কোষ বিভাজনের পর সৃষ্ট নতুন ভাইরাসটি আর আগের মতো শক্তিশালী থাকে না।

ওষুধটির মানবদেহে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার অন্তর্বর্তী ফলাফলে দেখা গেছে, ওষুধটি সেবনের পর পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৭০০ জনের বেশি রোগী অপেক্ষাকৃত কম সময়ে রোগমুক্ত হয়েছেন। ওই রোগীদের কেউই করোনার টিকা নেননি। অর্থাৎ ওষুধটি কেবল হাসপাতালে ভর্তির হারই কমায় না, করোনায় মৃত্যুও প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম। পরীক্ষায় দেখা গেছে, ওষুধটি গ্রহণকারী কোনো রোগীরই করোনায় মৃত্যু হয়নি। তবে পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ ফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি এবং পিয়ার রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত হয়নি।