ঢাকার সাভারের ইমান্দিপুর এলাকায় গত বছরের ১৮ জুলাই বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন স্থানীয় তোফাজ্জল হোসেন ওরফে টুনো (২৮) নামে এক যুবক। ঘটনার প্রায় ১১ মাস পর এক মাদক কারবারির বাড়ির ভেতরের একটি কক্ষের মাটি খুঁড়ে পাওয়া যায় নিখোঁজ ওই যুবকের হাড় ও মাথার খুলি। সীমা আক্তার নামে এক গৃহবধূর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে টুনো হত্যার রহস্য জানতে পারে পুলিশ। খবর ঢাকা মেইলের।

গ্রেপ্তার মাদক কারবারিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ অভিযান চালিয়ে এসব হাড় ও কঙ্কাল উদ্ধার করে। মাদক চোরাকারবার নিয়ে বিরোধের জেরে টুনোকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ডিবি কর্মকর্তারা জানান,২ জুন সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের খনিজনগর এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে নিখোঁজ হন সীমা আক্তার নামে এক গৃহবধূ। পরে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মোবাশশিরা হাবীব খানের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে গত বৃহস্পতিবার ঘটনার সঙ্গে জড়িত সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।

সাইফুলের দেওয়া তথ্যে খনিজনগর এলাকার মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় সীমা আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল সাভারের আনন্দপুর সিটি লেনে মাদক কারবারি স্বপনের দোতলা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষের মাটির ৭ ফুট নিচে গত বছর নিখোঁজ তোফাজ্জল হোসেন ওরফে টুনোকে হত্যার পর পুঁতে রাখার তথ্য দেন। তাঁর তথ্যের ভিত্তিতে মোবাশশিরা হাবীব খানের নেতৃত্বে গত সোমবার ডিবি পুলিশ ওই স্থানের মাটি খোঁড়া শুরু করে। তবে সন্ধ্যার দিকে খননকাজ বন্ধ করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে ধামরাই উপজেলার কুল্লা এলাকা থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ স্বপনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বেলা একটার দিকে স্বপনের বাসায় আবারও খননকাজ শুরু হয়। বিকেল চারটার দিকে মাটির ৭ ফুট নিচ থেকে বেশ কয়েকটি হাড় ও মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়।

টুনোর চাচা ওসমান গণি বলেন, ‘আমরা স্বপনের ফাঁসি চাই। সে ইয়াবা বেচে। সে সন্ত্রাসী। টুনো ইমান্দিপুরে স্বপনকে ইয়াবা বেচতে নিষেধ করেছিল। এই নিয়ে মাঝেমধ্যে দুজনের ঝগড়া হতো। আগে থেকেই স্বপনরে সন্দেহ করতাম। সে লোকজন ভাড়া নিয়া এলাকায় ইয়াবা বেচাতো।’

তিনি বলেন, ‘টুনো নিখোঁজের পর আমরা সাভার মডেল থানায় জিডি করি। এরপর এই বাসায় (স্বপনের) পুলিশ নিয়া একবার আসছিলাম। এরপর র‌্যাব ও ডিবি অফিসে অভিযোগ দেই। ডিবি আজ লাশ উদ্ধার করল।’

মঙ্গলবার (১১ জুন) রাতে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেন।

এসপি বলেন, সীমা অপহরণ ও হত্যা মামলার সূত্র ধরে ডিবি ও সাভার মডেল থানা-পুলিশ সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে। সাইফুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এবং কীভাবে সীমাকে হত্যা করা হয়েছে, সে ঘটনার বর্ণনা দেন। এ ছাড়া জড়িত স্বপনসহ পাঁচজনের নাম জানান। ওই ঘটনার তদন্ত চলাকালে টুনোর হত্যার বিষয়টি জানা যায়। এরপর মঙ্গলবার সকালে ধামরাই উপজেলার কুল্লা থেকে ডিবি আগ্নেয়াস্ত্রসহ স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদে স্বপনের বাসায় টুনোর মরদেহ মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে মনে হওয়ায় সোমবার ওই বাসার মাটি খোঁড়া হয়। এরপর স্বপনকে গ্রেপ্তারের পর সেও টুনোকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। পরে তাঁর দেখানো ঘরের নির্দিষ্ট জায়গায় খুঁড়ে মরদেহের কয়েক টুকরো হাড় ও মাথার খুলি পাওয়া যায়। মরদেহের পাশে একটি শার্ট পাওয়া গেছে, সেটি দেখে টুনোর স্ত্রী নিশ্চিত করেন, এটি তাঁর স্বামীর শার্ট। এ ছাড়া নিখোঁজের আগের সিসিটিভি ফুটেজে টুনোর পরনের শার্ট এবং পাওয়া শার্টটি একই হওয়ায় প্রাথমিকভাবে অঙ্গগুলো টুনোর বলে মনে হচ্ছে। ডিএনএ পরীক্ষার পর বিষয়টি আরও নিশ্চিতভাবে বলা যাবে।

গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, মাদক কারবারে বিরোধের জেরেই টুনোকে অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে।