প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান বিপিএম (বার)। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ১০ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

রোববার (১৩ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান বিপিএম (বার) জানান, শনিবার (১২ আগস্ট) মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানাধীন কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর ডিএমপির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য, ৫০টি ডেটোনেটর, ছুরি, রামদাসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র, কমান্ডো বুট, পাঞ্চিং ব্যাগ, প্রশিক্ষণ সামগ্রী, উগ্রবাদী বই, অর্থ ও স্বর্ণালংকার জব্দ করেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান বিপিএম (বার) জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা কথিত ইমাম মাহমুদের আহ্বানে সশস্ত্র জিহাদে অংশ ও প্রস্তুতি নিতে কথিত হিজরতের মাধ্যমে নিজ নিজ বাড়ি ছেড়ে ওই এলাকায় প্রশিক্ষণ শুরু করেন।

তিনি জানান, সম্প্রতি যশোর, সিরাজগঞ্জ, জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন বয়সী লোকজনের নিখোঁজ হওয়ার খবর মেলে। বিষয়টি অনুসন্ধান শুরু করে সিটিটিসির কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে ৭ আগস্ট রাজধানীর গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঝিনাইদহ, মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কথিত ইমাম মাহমুদের আহ্বানে সপরিবারে হিজরত করতে আসা ছয় নারী, চার পুরুষসহ মোট ১০ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের একটি টিম। এ সময় তাঁদের সঙ্গে থাকা আটটি শিশুকে হেফাজতে নেওয়া হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে মেহেরপুর জেলা থেকে হিজরতকারী পাঁচটি এবং ঝিনাইদহ জেলা থেকে হিজরতকারী একটি পরিবার ছিল।

তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, তাঁরা সবাই কথিত ইমাম মাহমুদের নেতৃত্বে স্থাপিত জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যোগ দিতে রওনা দিয়েছিলেন। তাঁরা মনে করেন, ইমাম মাহাদীর অগ্রবর্তী হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন ইমাম মাহমুদ। তাঁদের বিশ্বাস, কথিত ইমাম মাহমুদ ভারতীয় উপমহাদেশে জিহাদের নেতৃত্ব দেবেন। পরকালে পুরস্কার পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাঁদের জিহাদে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেন কথিত ইমাম মাহমুদ। তাই জিহাদের প্রস্তুতি নিতে তাঁরা ঘটনাস্থলে একত্র হয়েছিলেন।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত শনিবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে একই গ্রুপের সদস্য মো. ফরহাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ফরহাদ জানান, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার একটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় লোকচক্ষুর অন্তরালে কথিত ইমাম মাহমুদের নেতৃত্বে তাঁর বেশ কিছু অনুসারী আস্তানা গেড়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে চালানো হয় বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন হিলসাইড’। এ সময় চার পুরুষ ও ছয় নারী জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের সঙ্গে থাকা তিন শিশুকে হেফাজতে নেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, কথিত ইমাম মাহমুদের অনুসারী জামিল কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য জমি কিনেছিলেন। মিরপুর মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।