দেশের শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তায় এক যুগ ধরে কাজ করে চলেছে ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পুলিশ (শিল্প পুলিশ)। শৃঙ্খলা-প্রগতি-নিরাপত্তা—এই মন্ত্রে গৌরব, ঐতিহ্য, সাফল্য ও সংগ্রামের এক যুগ পূর্তি উদযাপন করছে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিট।
দেশের শিল্প খাতের অব্যাহত নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণ ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ইউনিটের উদ্বোধন করেন। স্বাধীনতা-উত্তর যুদ্ধবিধ্বস্ত শিল্প-কলকারখানা পুনর্নির্মাণ ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্বাধীনতার স্থপতি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অগ্রণী ভূমিকা পালনে অবতীর্ণ হন। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফসল বর্তমান ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ। উদ্বোধনের পর থেকেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ শিল্প এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধান এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে সমঝোতা, সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে কাল ১০ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান হতে চলেছে। অনুষ্ঠানে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টাসহ বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শিল্পক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ বিনিয়োগবান্ধব ও স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে নিরলসভাবে কাজ করছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ। এই ইউনিট গঠনের আগে কোনো শিল্পকারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ ও মালিকপক্ষের সাথে বিভেদ-সংঘাত সৃষ্টি হলে স্থানীয় পুলিশকে ভোগান্তিতে পড়তে হতো। এ ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ শ্রমিক অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হওয়ার আগেই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বিশৃঙ্খলা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা পালনে সমর্থ হয়। মূলত শিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএসহ বিভিন্ন শ্রমিকনেতার সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে শ্রমিক ও মালিক উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বিশেষায়িত এই ইউনিট। সামগ্রিকভাবে শিল্পক্ষেত্রে বিশেষ করে পোশাকশিল্প খাতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ এখন মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষের কাছে এক আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অ্যাডিশনাল আইজিপি মো. মাহাবুবর রহমান বিপিএম, পিপিএম বলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ দীর্ঘ এক যুগের পথচলায় সময়ের আবর্তনে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিল্প সেক্টরে বর্তমানে আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মূলত সেই দেশের শিল্প ও শিল্পায়নের ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্প খাতের ভূমিকা অপরিসীম।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রধান বলেন, বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাকালে ও সাম্প্রতিক চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বজুড়ে টালমাটাল অর্থনৈতিক অবস্থায় ছোট-বড় অনেক প্রতিষ্ঠান টিকে থাকার নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। অনেক কারখানা শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে। এ বাস্তবতায় কর্মী ছাঁটাই সহনশীল পর্যায়ে রাখা, বেতন-ভাতা পরিশোধ, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিল্প এলাকাকে শান্ত রাখতে ভূমিকা পালন করছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ। এ ছাড়া মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবকালীন শিল্প এলাকায় করোনার সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ, মাস্ক পরতে উৎসাহ দেওয়া, খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
অ্যাডিশনাল আইজিপি মো. মাহাবুবর রহমান বিপিএম, পিপিএম বলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ শিল্প এলাকায় কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নানা সমস্যার সমাধান করে থাকে। বিদেশিদের পাশাপাশি ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নিরাপত্তায় তারা ভূমিকা রাখছে। ঈদ বা অন্য কোনো ধর্মীয় উৎসবের আগে রুগ্ণ কারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধ করা নিয়ে যেন শ্রমিক অসন্তোষ না ঘটে, সে ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে সমস্যা সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে থাকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রধান বলেন, শিল্পাঞ্চলের অপরাধের মাত্রা ও প্রকৃতি ভিন্নতর। শিল্পসংশ্লিষ্ট মহলের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ শিল্প অধিক্ষেত্রে অবস্থিত ৬টি ইউনিটের মাধ্যমে ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি শিল্পসংশ্লিষ্ট মোট ৩৪০টি মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে দ্রুত প্রয়োজনীয় আইনগত তদন্ত কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে নিস্পত্তি করে আসছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের পেশাদারত্ব ও আন্তরিকতায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ায় এবং মালিক-শ্রমিক সম্পর্কে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের ফলে শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি ফিরে এসেছে এবং বিনিয়োগ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক যুগে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকা অপরিসীম।