গত বছরের নভেম্বরে ইউক্রেনীয় সেনাসদস্যরা রাশিয়ার দিকে গোলাবারুদ ছুড়ছেন। ছবি: বিবিসি বাংলা

ইউক্রেন যুদ্ধে গত ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি রাশিয়ার সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন গোপন গোয়েন্দা তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, আরও অন্তত ৮০ হাজার সেনাসদস্য আহত হয়েছেন। খবর বিবিসি বাংলার।

নিহতদের মধ্যে অর্ধেকেই ওয়াগনার নামে একটি ভাড়াটে প্রতিষ্ঠানের, যারা পূর্বাঞ্চলীয় বাখমুত শহরে আক্রমণ চালিয়ে আসছেন। শ্বাসরুদ্ধকর যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে রাশিয়া গত বছর থেকে এই ছোট শহর বারবার দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছে।

মস্কো বর্তমানে বাখমুটের বেশির ভাগ অংশ দখল করে আছে। কিন্তু ইউক্রেনীয় সেনারা এখনো শহরটির পশ্চিমাঞ্চলে ছোট একটি অংশের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। দুই পক্ষের জন্যই এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ প্রতীকীভাবে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা এই যুদ্ধকে ব্যবহার করে যত বেশি সম্ভব রুশ সেনা হত্যা এবং তাঁদের মজুত কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।

মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশেষ করে বাখমুতের মাধ্যমে দনবাস অঞ্চলে রুশ আক্রমণের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়া কোনো বাস্তবিক কৌশলগত এবং উল্লেখযোগ্য অঞ্চল দখল করতে পারেনি। আমরা অনুমান করি, রাশিয়ার এক লাখের বেশি সেনাসদস্য হতাহতের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২০ হাজারের বেশি যুদ্ধে নিহত হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের হিসাব অনুযায়ী, এই সংখ্যার কারণে বাখমুতে ডিসেম্বরের শুরু থেকে এমন ক্ষয়ক্ষতি শুরু হয়।

জন কিরবি আরও বলেন, ‘মূল কথা হলো, রাশিয়া আক্রমণাত্মক চেষ্টার কয়েক মাস লড়াই এবং অসাধারণ ক্ষয়ক্ষতির পর পাল্টা আঘাত করেছে। তিনি এখানে ইউক্রেনের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দিচ্ছেন না; কারণ, তাঁরা এখানে ক্ষতিগ্রস্ত আর রাশিয়া আক্রমণকারী।

বিবিসি স্বাধীনভাবে এই পরিসংখ্যান যাচাই করতে পারেনি এবং এ নিয়ে মস্কো কোনো মন্তব্য করেনি।

বাখমুত শহরটি দখল করতে পারলে তা রাশিয়াকে পুরো দোনেৎস্ক অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের যে লক্ষ্য, সেটির বেশ কাছাকাছি নিয়ে আসবে। দোনেৎস্ক হচ্ছে পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যেটি গত সেপ্টেম্বরে এক গণভোটের পর রাশিয়ার অধিভুক্ত করা হয়েছিল। তবে একে ভুয়া উল্লেখ করে রাশিয়ার ব্যাপক নিন্দা জানানো হয়েছিল।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাখমুতের কৌশলগত মূল্য খুব কম, কিন্তু রুশ কমান্ডারদের জন্য এটি একটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, যারা ক্রেমলিনের কাছে কোনো ইতিবাচক খবর পৌঁছে দিতে পারেনি।

ওয়াগনার নামে ভাড়াটে গোষ্ঠী; যারা ব্যাপকভাবে অপরাধীদের ব্যবহার করে এবং তাদের অমানবিক পদ্ধতির জন্য কুখ্যাত হয়ে উঠেছে, তারাই বাখমুতের ওপর রুশ হামলার কেন্দ্রে রয়েছে। এই গোষ্ঠীর নেতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিন শহরটি দখল করার জন্য তার নিজের সুনাম এবং তার ব্যক্তিগত বাহিনী— দুটোকেই ঝুঁকিতে ফেলেছেন। কিন্তু তিনি সম্প্রতি বাখমুত থেকে তাঁর সেনা সরিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

রাশিয়ার একজন বিশিষ্ট যুদ্ধ-ব্লগারের কাছে এক বিস্তারিত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের অতিপ্রয়োজনীয় গোলাবারুদ সরবরাহ না করলে ওয়াগনার যোদ্ধাদের সরিয়ে নেবেন তিনি। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, ওয়াগনার যোদ্ধাদের মালিতে পুনরায় মোতায়েন করা যেতে পারে।

যুদ্ধের সময় তিনি প্রায়ই রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন এবং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাঁর যোদ্ধাদের যথেষ্ট সহায়তা না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।

ইউক্রেনের বসন্তের সময় প্রত্যাশিত পাল্টা আক্রমণের আগে আগে প্রিগোজিন রাশিয়ার মিডিয়া এবং সামরিক নেতৃত্বকে ‘রাশিয়ান জনগণের সঙ্গে মিথ্যা বলা বন্ধ করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের রাশিয়ার জনগণের কাছে, সবকিছু ঠিকঠাক চলছে- এমন মিথ্যা বলা বন্ধ করতে হবে। তিনি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ‘ভালো, সঠিক সামরিক অভিযান’ ও নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।

ইউক্রেনের একজন শীর্ষ জেনারেল সোমবার বলেছেন, পাল্টা আক্রমণের কারণে বাখমুতের কিছু অবস্থান থেকে রুশ সেনারা সরে গেছেন, তবে পরিস্থিতি এখনো ‘কঠিন’ অবস্থায় রয়েছে।

টেলিগ্রামে ইউক্রেনের স্থলবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল ওলেক্সান্ডার সিরস্কি বলেছেন, প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও ওয়াগনার গোষ্ঠীর প্যারাট্রুপার এবং যোদ্ধাদের নিয়মিতভাবে যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু শত্রুরা শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে অক্ষম।