১০ বছর আগে ডাকাত সন্দেহে পিটুনিতে নিহত ছয় ছাত্র। ফাইল ছবি

ঢাকার আমিনবাজারে দশ বছর আগে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় ১৩ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ইসমত জাহান বৃহস্পতিবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

এ মামলায় অভিযুক্ত ৬০ আসামির মধ্যে তিনজন বিচার চলাকালেই মারা যান। বাকি ৫৭ আসামির মধ্যে ১৩ জনকে সর্বোচ্চ সাজার আদেশ দিয়েছেন বিচারক। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

পাশাপাশি তাঁদের সবাইকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অন্য একটি ধারায় এই ১৩ জনকে আরও সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। অন্য একটি ধারায় তাঁদের ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রায়ে।
অভিযোগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার বাকি ২৫ আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত।

২০১১ সালে আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামে ছয়জনকে পিটিয়ে হত্যার ওই ঘটনা পুরো দেশকে স্তম্ভিত করে দেয়। পুলিশের অভিযোগপত্র পেয়ে ২০১৩ সালে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ৬০ আসামির বিচার শুরু করেন আদালত।

সাক্ষ্য আর যুক্তিতর্ক শেষ করে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসতে লেগে যায় আট বছর। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ২২ নভেম্বর রায়ের দিন ঠিক করে দেন বিচারক।
জামিনে থাকা ৪২ আসামির জামিন বাতিল করে সেদিন তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেনা আদালত। বাকি ১৬ আসামিকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার কাজ চলে।

ঘটনাক্রম
২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলার চরে বেড়াতে যান সাত তরুণ। তাঁরা সবাই ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তেন।

স্থানীয় কিছু লোক তাঁদের ধরে ডাকাত আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। তাতে একজন প্রাণে বাঁচলেও ছয়জন মারা যান।

নিহত ছয়জন হলেন ধানমন্ডির ম্যাপললিফ স্কুলের ‘এ’ লেভেলের ছাত্র শামস রহিম শাম্মাম, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ইব্রাহিম খলিল, বাঙলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের তৌহিদুর রহমান পলাশ, তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের টিপু সুলতান, মিরপুরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের সিতাব জাবীর মুনিব এবং বাঙলা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র কামরুজ্জামান।

হামলায় গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান কেবল আল-আমিন। পরে তাঁর কাছ থেকে সেই রাতের ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।
ওই হত্যাকাণ্ডের পর সাভার থানা-পুলিশ একটি মামলা করে, যাতে অজ্ঞাতপরিচয় গ্রামবাসীদের আসামি করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন।

অন্যদিকে ডাকাতির অভিযোগ এনে আল-আমিন এবং তাঁর নিহত ছয় বন্ধুর নামে একটি মামলা করেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী মালেক।

পরে আলোচিত ওই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তে বেরিয়ে আসে, নিহত ছাত্ররা ডাকাত ছিলেন না।

মালেকের অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় তাঁর মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগে মালেকের বিরুদ্ধে মামলা করারও নির্দেশ দেন আদালত।

ছয় ছাত্রকে হত্যা মামলার তদন্তভার থানা-পুলিশের হাত থেকে সিআইডি এবং পরে আদালতের নির্দেশে র‌্যাবের হাতে যায়।

র‌্যাবের সহকারী পরিচালক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি সেই মালেকসহ ৬০ জনকে আসামি করে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
ওই বছরের ৮ জুলাই ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ মো. হেলালউদ্দিন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। বেঁচে যাওয়া একমাত্র ভিকটিম আল-আমিনকে ডাকাতির মামলা থেকে সেদিনই অব্যাহতি দেওয়া হয়।

তদন্ত চলাকালে আসামিদের ১৪ জন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। আর মামলার বিচারকালে রাষ্ট্রপক্ষে ৫৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয় বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শাকিলা জিয়াসমিন মিতু।