কাল প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ময়মনসিংহ শহরজুড়ে সাজ সাজ রব। ছবি: আজকের পত্রিকা।

পাঁচ বছর পর কাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহে যাচ্ছেন। বিকেলে ঐতিহাসিক সার্কিট হাউস ময়দানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি। উদ্বোধন করবেন ৭৩টি নতুন প্রকল্প, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন ৩০টি প্রকল্পের। খবর আজকের পত্রিকার।

ময়মনসিংহ বিভাগ, সিটি করপোরেশনসহ নানা উন্নয়নের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ময়মনসিংহে আগমনকে কেন্দ্র করে সর্বত্রই সাজ সাজ রব। ব্যানার-ফেস্টুন, বিলবোর্ড আর সুদৃশ্য তোরণে ছেয়ে গেছে নগরীর প্রতিটি সড়ক, সড়কদ্বীপসহ অলিগলি। ঐতিহাসিক সার্কিট হাউস ময়দানে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসভা হবে বলে দাবি আওয়ামী লীগ নেতাদের।

শনিবার প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন ৭৩টি প্রকল্প। এর মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসংলগ্ন স্থানে ছবির ভিত্তিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, ত্রিশালে ১ হাজার আসনের অডিটরিয়াম কাম কম্পিউটার সেন্টার, ৩২ পৌরসভার পানি সরবরাহ, মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন প্রকল্প, ২১ বিদ্যালয় ও কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন, পাঁচটি ব্রিজ, দুটি স্মৃতিসৌধ, তিনটি বাজার ও ছয়টি ভবন।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ৩০টী প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল কাম বাণিজ্যিক ভবন, ছত্রপুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ১০ তলা একাডেমিক ভবন, আনন্দ মোহন সরকারি কলেজের নির্মাণাধীন ৫০০ শয্যা পাঁচতলা হোস্টেল ভবন, তিনটি ব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, চতুর্থ স্বাস্থ্য জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক অপারেশন প্ল্যানের আওতায় ১০ তলা ভিতের ছয়তলা বার্ন ইউনিট, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের সাতটি আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় চারতলা ভিতের তিনতলা ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়, মাল্টিপারপাস হল ইত্যাদি।

এর আগে ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণার পর ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর সার্কিট হাউসের জনসভায় ১০৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৯৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের নতুন করে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। বিগত সময়ে ময়মনসিংহের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছু চায়নি। নেত্রী যা অনুধাবন করেছেন তাই দিয়েছেন। এবারও চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। উনি যা ভালো মনে করবেন তাই দেবেন, আমরা তাতেই খুশি।’

ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামূল হক টিটু বলেন, ‘বিভাগ, সিটি করপোরেশন এবং শিক্ষা বোর্ড সবই নেত্রী আমাদের দিয়েছেন। আমরা নতুন করে তাঁর কাছে কিছু চাই না। এগুলো বাস্তবায়ন হলে মানুষ সুফল ভোগ করতে পারবে। আমরা নেত্রীর জনসমাবেশে ১২ লাখের মতো মানুষের সমাগম ঘটাতে চাই। ময়মনসিংহবাসী শনিবার আনন্দের সঙ্গে নেত্রীর জনসভায় যোগদান করবেন।’

ময়মনসিংহ জন-উদ্যোগের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, জন-উদ্যোগের পক্ষ থেকে ১৮ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিমানবন্দর, আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম নির্মাণ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর, ময়মনসিংহ নগরীর সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ যানজট নিরসনসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের দৃশ্যমান প্রস্তুতির দাবিতে বিভিন্ন মহলে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমিন কালাম বলেন, ‘সবাইকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা বিভাগ, সিটি করপোরেশন ও শিক্ষা বোর্ডের বাস্তবায়ন করেছি। বিভাগ গঠনের প্রায় সাড়ে সাত বছর হলেও অবকাঠামোগত আমরা দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছি না। উন্নয়ন দৃশ্যমানসহ আমাদের ২৩ দফা যৌক্তিক দাবি, আশা করি প্রধানমন্ত্রী আমলে নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন।’

নুরুল আমিন কালাম আরও বলেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যার চেয়ে রোগী প্রায় ১০ গুণ বেশি। রোগীরা শয্যা না পেয়ে বারান্দা, করিডর, মেঝেতে চিকিৎসা সেবা নেন। ৩ হাজার শয্যার হাসপাতাল, ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা, শেরপুর জেলার সঙ্গে রেল যোগাযোগ, শহরের যানজট নিরসনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।

জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মেদ ভূঁইয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে জনসভাস্থলসহ আশপাশের এলাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত রয়েছে তিন হাজার পুলিশ। ঐতিহাসিক সার্কিট হাউস মাঠের আশপাশের এলাকায় সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। শহরে যান চলাচল সীমিত করা হয়েছে।