খুলনা সদর থানা প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে কেএমপি কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

চলতি বছরের আগস্ট মাসে রেকর্ড সাফল্য অর্জন করেছে খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি)। কেএমপি কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক (বিপিএম-বার, পিএিম-সেবা) বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে খুলনা সদর থানা প্রাঙ্গণে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সাফল্যের বিস্তারিত এই তথ্য তুলে ধরেন। মূলত খুলনা সদর থানার অভিযানে ৬টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার ও চক্রের ২ সদস্য গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন। তবে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত মহানগর পুলিশের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের তথ্য সাংবাদিকদের জানান কেএমপি কমিশনার। খবর খুলনা টাইমসের।

পুলিশ কমিশনার জানান, মাত্র ২৪ দিনে পৃথক অভিযান চালিয়ে ১৪টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার, চক্রের ১০ সদস্য গ্রেপ্তার করেছে মহানগর পুলিশ। যার মধ্যে খুলনা সদর থানার অভিযানে ৬টি, আড়ংঘাটা থানার ৬টি, দৌলতপুর থানার ১টি এবং অন্য একটি থানার অভিযানে একটি চোরাই মোটরসাইকেল জব্দ হয়। এছাড়া ৪টি অস্ত্র উদ্ধার হয়, ৪টি ম্যাগাজিন, ১৫ রাউন্ড গুলি, ৩টি কুড়াল ও ৪টি চাপাতি রয়েছে। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে ২টি ইজিবাইক, ৩০ মিটার বৈদ্যুতিক আর্থিং কেবল ও জাল নোট জব্দ করা হয়েছে। ৩৫৭২ পিস ইয়াবা, ১৭৮ লিটার দেশি-বিদেশি মদ ও ২৫ কেজি ১১০ গ্রাম গাঁজা জব্দ করা হয়।

মাদক, জুয়া, ভূমিদস্যু এবং দেহ ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ১৩ আগস্ট এক বিবৃতি দেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা। বিবৃতিতে অবিলম্বে খুলনা মেট্টোপলিটন এলাকার এ সকল দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করে কেএমপির পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ সর্বদা খুলনার গণমানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বদ্ধ পরিকর। এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই খুলনা মহানগর পুলিশ কাজ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১ আগস্ট থেকে খুলনা মহানগর পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। জঙ্গি, সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী, অনলাইন জুয়াড়ি, ইভটিজার, ভূমিদস্যু, মাদক ব্যবসায়ীসহ নানান ধরনের ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত এবং জিআর ও সিআর পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করা অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।’

এ সময় কেএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) সাজিদ হোসেন, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ কমিশনার (খুলনা জোন) এসএম বায়জীদ ইবনে আকবর, সহকারী পুলিশ কমিশনার (স্টাফ অফিসার) ইমদাদুল হক এবং খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ হাসান আল-মামুনসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

এরই ধারাবাহিকতায় কেএমপির খুলনা থানার এসআই সুজিত মিস্ত্রীর নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ২৩ আগস্ট রাত পৌনে ৮ টার সময় সোনাডাঙ্গা থানাধীন আল-ফারুকের মোড়স্থ বাপ্পির বাড়ির ভাড়াটিয়া আসামি সুমন মিস্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সুমন পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার গাউখালী গ্রামের কৃষ্ণ মিস্ত্রী ও কিরন মিস্ত্রী দম্পতির ছেলে।

পরবর্তীতে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে লিটন শেখকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়। লিটন বাগেরহাট সদরের খানদার নিবাসী শামছু শেখ ও আলেয়া বেগম দম্পতির ছেলে এবং মুকসুদপুর সদর হাসপাতালসংলগ্ন মিজান শেখের বাড়ির ভাড়াটিয়া। তার হেফাজতে থাকা ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে সুমন মিস্ত্রী এবং লিটন শেখের স্বীকারোক্তি মতে লিটন শেখের হেফাজতে থাকা ভাড়াটিয়া বাসা থেকে ৬টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২৩ আগস্ট বেলা ১টার সময় কেএমপি হরিণটানা থানাধীন জিরোপয়েন্ট মোড়স্থ ভ্যান স্ট্যান্ডের সামনে পাকা রাস্তার ওপর হতে ১ কেজি গাঁজাসহ নারী আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২২ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টায় লবণচরা থানার বিশেষ অভিযানে চাপাতিসহ চিহ্নিত চাঁদাবাজ হোসেন হেলাল ওরফে কোপা হেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওইদিন রাত সাড়ে ৯টায় লবণচরা থানা পুলিশের টিম মোহাম্মদনগর মেম্বার সড়কে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অনলাইন জুয়া খেলার সময় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। খানজাহান আলী থানা-পুলিশের অভিযানে ২২ আগস্ট রাতে খানজাহান আলী থানাধীন ইস্টার্ণ জুট মিলের প্রধান ফটকসংলগ্ন ফলের দোকানের সামনে থেকে মশিয়ালী পূর্বপাড়া সিএন্ডবি এলাকার মাসুদ রানাকে (৪২) ১০৭ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

সূত্র জানায়, ২০ আগস্ট বেলা ১২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খালিশপুর থানা-পুলিশের বিশেষ অভিযানে অন্তর্ঘাতমূলক ষড়যন্ত্র করার জন্য সমবেত হওয়ার অভিযোগে রকিবুল ইসলাম (২৪), তামিম ইকবাল (১৯) এবং আনিছা সিদ্দিকাকে (৪৫) গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে খালিশপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে।

সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশের অভিযান ২০ আগস্ট রাতে ২ জন ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার ও ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়। ১৯ আগস্ট রাতে লবণচরা থানা-পুলিশের বিশেষ অভিযানে কিশোর গ্যাং গ্রুপের নেতৃত্বদানকারী জিয়ারুল গাজী এবং মাদক ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম ওরফে অপুকে ২ শ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়

১৮ আগস্ট হরিণটানা থানা পুলিশ কর্তৃক বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানার গজালিয়া গ্রামের হারিয়ে যাওয়া মেজবাহ শেখের ছেলে ফাহিমকে খুলনা জিরোপয়েন্ট থেকে উদ্ধার পূর্বক তার মা ফাতেমার নিকট বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

এছাড়া চলতি মাসের বিভিন্ন সময় আরও ২২ জনকে অস্ত্র-মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় চুরি হওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।