প্রথম ছবি অভিনেত্রী শিমুর। ক্যাপশন: অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু। ছবি: সংগৃহীত

তদন্তের সময় একটি প্লাস্টিকের সুতার সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু (৪১) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় শিমুর স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল (৪৮) ও তাঁর বাল্যবন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদকে (৪৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অভিনেত্রী শিমু সপরিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কলাবাগান থানার গ্রিন রোড এলাকায় থাকতেন। ১৭ জানুয়ারি (সোমবার) সকাল ১০টার দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানার হযরতপুর ইউনিয়নের আলীপুর ব্রিজ এলাকায় রাস্তার পাশে ঝোপের ভেতর থেকে শিমুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই দিনই কলাবাগান মডেল থানায় স্ত্রী নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শিমুর স্বামী নোবেল।

পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লাশ উদ্ধারের পর তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে নিহত নারীর পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে, পাশাপাশি অভিনেত্রী শিমুর বাসায় গিয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে। এ সময়ই একটি প্লাস্টিকের সুতার সূত্র ধরে উদঘাটিত হয় হত্যার মূল রহস্য। লাশ গুম করতে দুটো বস্তা যে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, সেই সুতারই হুবহু এক বান্ডিল শিমুর স্বামী নোবেলের গাড়িতে পাওয়া যায়। গাড়িটি ধোয়া ছিল এবং দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোবেলকে আটক করে পুলিশ।

দ্বিতীয় ছবির ক্যাপশন: শিমু হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার তাঁর স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল ও স্বামীর বন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদ। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর নোবেল ও তাঁর বন্ধু ফরহাদ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। জিজ্ঞাসাবাদে শিমুর স্বামী জানান, পারিবারিক কলহের জেরে তিনি শিমুকে হত্যা করেছেন। ১৬ জানুয়ারি (রোববার) সকাল ৭টা-৮টার দিকে তিনি শিমুকে গলাটিপে হত্যা করেন। এরপর ফরহাদকে মুঠোফোনে কল করে ডেকে নেন। পরে ফরহাদ ও নোবেল পরিকল্পনা করে বাইরে থেকে বস্তা এনে শিমুর লাশ লম্বালম্বিভাবে দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন। এরপর বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর লাশ নিয়ে বেরিয়ে যান। প্রথমে নোবেল ও ফরহাদ মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে লাশ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তাঁরা আবার বাসায় ফেরেন। ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আবার তাঁরা লাশ গুম করতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার হযরতপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকার আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপের ভেতর লাশটি ফেলে চলে যান। তখন রাত সাড়ে নয়টা।

বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ আরও জানায়, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। অভিনেত্রী শিমুর স্বামী নোবেল ও তাঁর বন্ধু ফরহাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা দুজনই মাদকাসক্ত ও বেকার।