নিজের প্রকৃত পরিচয় গোপন করে অন্যের শিক্ষাসনদ, জন্মসনদ এবং বায়োডাটায় নিজের ছবি যুক্ত করে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, অপসোনিন গ্রুপসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রায় ১০ বছর চাকরি করেছেন মো. সুজন (৩৮)। এ সময় আত্মসাৎ করেছেন লাখ লাখ টাকা। তবে অভিনব প্রতারণার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আসামির বিরুদ্ধে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে চাকরি করে প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ এবং অন্যের পরিচয় ধারণের অভিযোগ এনে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। আসামি মো. সুজন রংপুরের কোতোয়ালি থানা এলাকার বাসিন্দা।

জানা যায়, গত ২১ নভেম্বর পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ আজাদ হোসেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১৫, ঢাকায় অভিযোগ করেন, মো. মাসুম খান পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩ জুলাই পর্যন্ত সিনিয়র মেডিকেল ইনফরমেশন অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন কেমিস্টের কাছ থেকে ৭ লাখ ৭২ হাজার ১৯৪ টাকা নির্ধারিত ডিপোতে জমা না করে আত্মসাৎ করেন। পরবর্তী সময়ে কোম্পানি বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করলে তাঁর আপন ভাই মো. সুবিন ইসলামকে ধানমন্ডির অফিসে নিয়ে আসেন। গত ১৫ জুলাই মো. সুবিন ইসলাম জিম্মাদার হিসেবে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকার করেন, গত বছরের ১৫ অক্টোবরের মধ্যে মো. মাসুম খান কোম্পানির টাকা পরিশোধ করবেন। পরে তাঁকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠালেও টাকা ফেরত দেননি।

বিজ্ঞ আদালত অভিযোগটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। তদন্তের এক পর্যায়ে পিবিআই জানতে পারে, আসামী মো. সুজন (৩৮) নিজের প্রকৃত পরিচয় গোপন করে মো. মাসুম খানের শিক্ষাসনদ, জন্মসনদ এবং বায়োডাটায় নিজের ছবি যুক্ত করে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সিনিয়র মেডিকেল ইনফরমেশন অফিসার পদে যোগদানের আবেদন করেন। নিয়োগ পেয়ে মো. মাসুম খানের নাম ধারণ করে কাজ করছিলেন। চাকরিকালে বিভিন্ন কেমিস্টের কাছ থেকে ৭ লাখ ৭২ হাজার ১৯৪ টাকা নির্ধারিত ডিপোতে জমা না করে আত্মসাৎ করেন। পরে অব্যাহতি দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। পরবর্তী সময়ে আসামি তাঁর কথিত ভাই সুবিন ইসলামকে কোম্পানির ধানমন্ডি অফিসে নিয়ে আসেন এবং সুবিন ইসলাম টাকা পরিশোধের জিম্মাদার হন।

পিবিআইয়ের তদন্তে প্রকাশ পায়, আসামি সুজন অন্যের শিক্ষাসনদ, জন্মসনদ এবং বায়োডাটায় নিজের ছবি যুক্ত করে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করে আসছিলেন। তাঁর সিমকার্ডের রেজিস্ট্রিশনও ভুয়া। দীর্ঘ চেষ্টার পর আসামির প্রকৃত নাম-ঠিকানা যাচাই করে আসামিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। যার কাগজপত্র ব্যবহার করা হয়েছে তিনি প্রকৃতপক্ষে মো. মাসুম খান। তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে কর্মরত। আসামি মো. সুজন ও লাইব্রেরিয়ান মাসুম খান একই মেসে ভাড়া থাকতেন। সেই সুবাদে কৌশলে মো. সুজন লাইব্রেরিয়ান মাসুম খানের শিক্ষাসনদ, জন্মসনদ, বায়োডাটার ফটোকপি সংগ্রহ করে রাখে। পরে সেই কাগজ দিয়ে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস, অপসোনিন গ্রুপসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করে আসছিলেন।