প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলছেন ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার)। ছবি: ডিএমপি

অনলাইনে জুয়া (বেটিং) পরিচালনাকারী বাংলাদেশের দুই মাস্টার এজেন্টসহ তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। আসামিরা হলেন মো. তরিকুল ইসলাম ওরফে বাবু, রানা হামিদ ও মো. সুমন মিয়া।

১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে ডিবি-সাইবারের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম ও অর্গানাইজ ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। রমনা মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় আসামিদের তিন দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেট কার, ১১ লাখ ৮০ টাকা, ৪টি মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ২৩টি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট জব্দ করে পুলিশ।

গতকাল বুধবার সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার)। তিনি বলেন, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে অনলাইনে জুয়া (বেটিং) খেলার সাইট থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি, সম্পদ অর্জন করেছেন। তাঁরা মূলত মোবাইল ব্যাংকিং/ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অবৈধ অর্থের লেনদেন (ই-ট্রানজেকশন) করে থাকেন। www.mazapbu.com ও www.betbuzz365 live-এ দুটি বেটিং ওয়েবসাইটের বাংলাদেশের মাস্টার এজেন্ট তাঁরা। সাইটগুলোর মাস্টার এজেন্ট হিসেবে দেশের বাইরে থাকা সুপার এজেন্টের কাছ থেকে প্রতিটি পিবিইউ (নিজস্ব ভার্চুয়াল কারেন্সি) ৬০ টাকার বিনিময়ে কিনে থাকেন। পরবর্তী সময়ে লোকাল এজেন্টের কাছে প্রতিটি পিবিইউ ১০০ টাকায় বিক্রি করেন।

তিনি আরও বলেন, আসামিরা ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় লোকাল এজেন্ট নিয়োগ করে থাকেন। লোকাল এজেন্টে বেটিংয়ে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে প্রতিটি পিবিইউ ১৫০ টাকায় বিক্রি করেন। এই কাজে অবৈধ অর্থের আদান-প্রদান মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করা হয়। এভাবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের অর্থ আসামিদের মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে যায়। আসামিরা ভুয়া ফেসবুক আইডি ও বিদেশি নম্বরের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ খুলে বেটিং সাইডগুলো পরিচালনা করে এবং গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

আসামিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনলাইন জুয়া একটা নেশার মতো, এখানে একবার ঢুকলে নিঃস্ব হওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই। অংশগ্রহণকারীরা নিঃস্ব হয়ে যাওয়ায় পারিবারিক সহিংসতা বাড়ছে, আইনশৃঙ্খলার ওপর প্রভাব পড়ছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাশিয়া, মালয়েশিয়া ও ভারত থেকে এ সাইটগুলোর ডোমেইন ব্যবহৃত হয়। বিটিআরসি অনেক সাইট বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে এগুলো পরিচালনা করছেন। মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে।

অনলাইন জুয়া পরিচালনাকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, যাঁরা এখনো অনলাইন জুয়ায় জড়িত, তাঁরা যদি এ খেলা ছেড়ে অন্য পেশায় না আসেন, তাহলে পরিণতি গ্রেপ্তার আসামিদের মতো হবে।